চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সাংবাদিক হেনস্থার অভিযোগে স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত ১২ শিক্ষার্থীকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখে সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ৩টায় ৫৫৯তম (এক্সট্রাঅর্ডিনারি) সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “সিন্ডিকেট সভায় বহিষ্কার আদেশ পাওয়া ১২ শিক্ষার্থীকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া এক ছাত্রীর সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে তার স্থায়ী বহিষ্কার আদেশ বহাল থাকবে।”

তিনি বলেন, “আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া অপরাধীদের শাস্তি বাতিলও হতে পারে, আবার বহালও থাকতে পারে। তারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবে।”

গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা হলের নামফলক ও হলের সামনে কংক্রিট নির্মিত নৌকা ভাঙতে যান। এ সময় তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ কুরবান আলীকে থাপ্পড় দেন হলটির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা এনায়েত এমি।

এ ঘটনায় আফসানা এনায়েত এমিকে স্থায়ী বহিষ্কার ও তার সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং ধর্ম অবমাননার দায়ে মোট ১২ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ