গাজীপুরের কালীগঞ্জে সূর্যমুখী ফুলের একটি বাগান দেখতে দর্শনার্থীদের গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। শুরুতে প্রবেশ মূল্য ছিল ২০ টাকা। লোক সমাগম বেশি ও বাগানে ক্ষতির মাত্রা বেড়ে গেলে পরে প্রবেশ মূল্য বাড়ানো হয়। 

কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ গ্রামে একটি সূর্যমুখী ফুলের বাগানে গেলে দেখা যায়, বাগানের পাশেই বড় করে একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে “অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা’’। 

প্রবেশমুখের অপর একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘‘ফুল ছিঁড়লে জরিমানা ২০০ টাকা, গাছ ভাঙলে জরিমানা ২০০ টাকা’’।

সূর্যমুখী বাগানে দর্শনার্থী

সাওরাইদ গ্রামে সূর্যমুখী অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রচলিত দ্বি-ফসলী শস্য বিন্যাসকে তিন শস্য বিন্যাসে উন্নয়নের লক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগ একটি প্রকল্প হাতে নেয়। রবি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ওই গ্রামের কৃষক যতীন্ত্র, হিরোন, সাইফুল, জসিম, রশিদ, নয়ন, রুহি দাস, নিষ কাঞ্চন, নারায়ণ ও লিটন বিশ্বাস নামের ১২ জন সহযোগী কৃষককে নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। কৃষকরা বিনামূল্যে বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের বীজ ও রাসায়নিক সার সবরাহ করা হয়।   

কৃষক লিটন বিশ্বাসের ভাতিজা বিপুল বিশ্বাস বাগানে প্রবেশের পথ আটকে জনপ্রতি ৩০ টাকা প্রবেশমূল্য নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছেন দর্শনার্থীদের। 

বাগান রক্ষক বিপুল বিশ্বাস জানান, প্রতিদিন এখানে শতাধিক দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। তবে সৌন্দর্য উপভোগে প্রবেশ মূল্য টাকা নির্ধারিত থাকলেও সময়ের ব্যাপারে কোন নির্ধারিত সময় দেওয়া নেই। দর্শনার্থীরা ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত ও আপ্লূত হচ্ছেন।

সূর্যমুখী বাগানে দর্শনার্থী

তিনি বলেন, “এখন বেশিরভাগ গাছে ফুল ফুটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জেনে বিপুলসংখ্যক সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ বিগত ১৫ দিন ধরে ভিড় জমাচ্ছেন এই বাগানটিতে। লোকজনকে সামাল দিতে প্রতিদিন ৪ থেকে ৭ জন লোক এখানে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন।”

কথা হয় বাগানে ঘুরতে কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে। এ সময় গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল কয়ের এলাকার রাজন ঘোষ বলেন, “যদিও টিকেটের মাধ্যমে সূর্যমুখী বাগানে আসতে হয়। তবুও এখানে সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আগে ২০ টাকা টিকেট থাকলেও এখন দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকায় এখন ১০ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। তবু ঘোরার মত একটা জায়গা তৈরি হয়েছে এখানে।”

কালীগঞ্জ পৌরসভার ভাদার্ত্তী এলাকার শহিদুল সরকার জাকির বলেন, “রাস্তা দিয়ে বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেল করে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ চোখে পড়লো সূর্যমুখীর বিশাল বাগান। অনেক মানুষের কোলাহল। তাই মোটরসাইকেল রাস্তায় পার্কিং করে দুই বন্ধু ৩০ টাকা করে টিকেট কেটে বাগানে ঘুরলাম।”

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, “ফসলের আশায় সূর্যমুখীর বাগান করলে সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ উন্মুক্ত করা উচিত নয়। এতে দর্শনার্থীর পদচারণায় বাগানের মাটি শক্ত হয়। আর তাতে গাছ ঠিক মত নিউটেশন নিতে পারেনা এবং ফুলটাও বড় হয় না। ফুলের বীজগুলো বড় হয় না এবং তেলটাও ঠিকভাবে নিতে পারে না।”

ঢাকা/রফিক/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৩০ ট ক স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ