বিশ্ববিখ্যাত স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড ভ্যাসলিন নিয়ে এলো নতুন পণ্য ভ্যাসলিন গ্লুটা হায়া সিরাম ইন লোশন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইউনিলিভার বাংলাদেশের স্কিন কেয়ারের এই নতুন সংযোজন ‘ভ্যাসলিন গ্লুটা হায়া’র লঞ্চিং ইভেন্ট দ্যা গ্লো সিটি। আর গ্লো সিটির হোস্ট হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম তারকা ও  কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ। তার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় গ্লো সিটি ইভেন্ট হয়ে উঠেছিল আরও মনোমুগ্ধকর।

লোশন বলতে আমরা শুধু শীতকালে ব্যবহার করা যায় বুঝি। কিন্তু ভ্যাসলিন এবার নতুন পণ্য গ্লুটা হায়া সিরাম ইন লোশন, লঞ্চের মাধ্যমে স্কিন কেয়ার জগতে বিশেষ সাড়া ফেলে দিয়েছে। যা সব ধরনের আবহাওয়ায় এবং সারাবছর ত্বককে ময়েশ্চারাইজড ও গ্লোয়িং রাখতে সাহায্য করবে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে বিশেষভাবে তৈরি এই লোশনে আছে অনন্য সিরামের কম্বিনেশন যা মুখের সঙ্গে আপনার হাত-পায়ের ত্বকেরও যত্ন নেবে। এর ফর্মুলা দ্রুত শোষিত হয়ে ত্বকে ইনস্ট্যান্ট উজ্জ্বলতা নিয়ে এসে ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করবে।

সাধারণত সিরাম মুখের যত্নেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ভ্যাসলিনের আমদানিকৃত অথেন্টিক প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট গ্লুটা হায়া সিরাম-ইন-লোশন ত্বকের প্রতি যত্নশীল কনজিউমারদের জন্যই তৈরি। যারা সিরামকে প্রাধান্য দিয়ে স্কিন কেয়ারে আগ্রহী এবং হাত-পায়ের যত্নে সিরামের গুরুত্ব অনুভব করে এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যা সারা শরীরে ব্যবহার করা যায়। এতে থাকা শক্তিশালী উপাদান ত্বকের গভীরে কাজ করে ময়েশ্চার লক করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। গরম হোক বা শীত, এটি ত্বককে হাইড্রেট রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে। 

নতুন গ্লুটা হায়া রেঞ্জের দুটি ভ্যারিয়েন্ট। ডিউই রেডিয়েন্স ও ফ্ললেস গ্লো। যা গ্লুটা হায়া কনজিউমারদের ব্যক্তিগত পছন্দ ও প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করা হয়েছে। এর ডিউই রেডিয়েন্সে আছে গ্লুটা গ্লো, হায়ালোরন এবং নায়াসিনামাইড, যা ভিটামিন সি’র তুলনায় ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে দেয় ইনস্ট্যান্ট উজ্জ্বলতা। যা প্রথম ব্যবহারেই দেখা যায় চোখে পড়ার মতো গ্লো।

আরেকটি ভ্যারিয়েন্স ফ্ললেস গ্লো, যাতে রয়েছে গ্লুটাথিয়ন, হায়ালোরন ও প্রো-রেটিনল, যা ময়েশ্চারাইজ করে ত্বকের দাগ  কমিয়ে দেয় উজ্জ্বলতা। এই লোশনগুলোর লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এটি নন-স্টিকি ও লাইটওয়েট ফর্মুলা যা সারাবছরই ব্যবহারযোগ্য।

ঢাকার অভিজাত আলোকি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত আমেজিং গ্লুটা হায়ার এই গ্ল্যামারাস লঞ্চিং ইভেন্টে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের নামকরা ইনফ্লুয়েন্সার, বিউটি এক্সপার্ট, সেলিব্রিটি এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা। যাদের উপস্থিতিই ইভেন্টের শোভা বাড়িয়ে তোলে। 

ইভেন্টের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল এর বিভিন্ন জোন। এর মধ্যে ইন্টারেক্টিভ গ্লুটা গ্লো জোন ছিল যেখানে গেস্টরা প্রোডাক্টটি ব্যবহার করে এর ইন্সট্যান্ট রেজাল্ট বুঝতে পারেন এবং এই বিষয়ে মতামত শেয়ার করেন। এছাড়া আরও ছিল গ্লো ক্যাফে, গ্লো ফ্রেম, গ্লো রানওয়ে। শ্যাম্পেইন এবং রোজ গোল্ডের আবহে পুরো ইভেন্ট ছিল ইন্সটা ফ্রেন্ডলি, ফলে ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের কন্টেন্ট তৈরিতে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এ যেন ছিল সেলিব্রিটি ও বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের মিলন মেলা। জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং সৌন্দর্য জগতের পরিচিত মুখরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে  ভ্যাসলিন গ্লুটা হায়া সিরাম-ইন-লোশনের প্রশংসা করেন। ইভেন্টে অতিথিরা শুধু নতুন প্রোডাক্টের অভিজ্ঞতাই লাভ করেননি, বরং অনুষ্ঠানের শেষে তাদের জন্য ছিল এক্সক্লুসিভ গুডি ব্যাগ, যাতে ছিল ভ্যাসলিন গ্লুটা হায়ার বিশেষ গিফট প্যাক। 

প্রোগ্রামে হোস্টসহ ট্রেন্ডসেটার এবং গর্জিয়াস গেস্টরা কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের পাশাপাশি গ্রুপ ফটো সেশন করেন। সঙ্গে ছিল আরও অনেক আয়োজন। ফলে ইভেন্টটি আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। সবশেষে হোস্ট আজরা মাহমুদ ইউনিলিভার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবাইকে ইভেন্টে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে গ্লুটা হায়া’র চমকপ্রদ মোড়ক উন্মোচন ইভেন্টটি শেষ করেন।   

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ক নক য় র র পচর চ ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক কমেছে, বাংলাদেশে স্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর বাংলাদেশের ওপর দেশটির আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার শেষ পর্যন্ত ২০ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে। নতুন শুল্কহার ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় এ কথা বলা হয়। বাণিজ্য বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কহার কমে প্রতিযোগীদের কাছাকাছি অবস্থানে আসার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক।

২৯ জুলাই থেকে তিন দিনের আলোচনা ও দর-কষাকষির শেষ দিন ৩১ জুলাই এ ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭০টি দেশের ওপর ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে।

পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ নামিয়ে আনতে বাংলাদেশের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকেও বেশ কিছু সুবিধা দিতে হয়েছে। একদিকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার প্রায় শূন্য করে দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পান গত ২১ জানুয়ারি। এর দুই মাস পর গত ২ এপ্রিল হঠাৎ বিশ্বের ৭০ দেশের জন্য বিভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। অনেকেই ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে একধরনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ বলে সমালোচনা করেছেন।

প্রথমে গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয় ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। মাঝখানে তিন মাস স্থগিত রাখার পর ৮ জুলাই তা কমিয়ে ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ করেন। বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ করায় মোট শুল্কহার দাঁড়াবে এখন ৩৫ শতাংশে।

দর-কষাকষির মাধ্যমে ঘোষিত শুল্কহার কমিয়ে আনাকে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের আলোচকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এটি সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন আলোচকদের মধ্যে আরও ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বলেছে, অনেক বিষয় জড়িত থাকায় শুল্ক আলোচনার প্রক্রিয়াটি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। শুল্ক ছাড় পাওয়ার বিষয়টি শুধু শুল্ক কমানোর সঙ্গেই যুক্ত ছিল না; বরং অশুল্ক বাধা, বাণিজ্যঘাটতি ও নিরাপত্তা–সংক্রান্ত মার্কিন উদ্বেগও ছিল এর সঙ্গে। সমাধানের বিষয়টি নির্ভর করছিল একটি দেশের সদিচ্ছার ওপরও।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব এবং যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম।’

প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্কহার

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বাংলাদেশের সমান ২০ শতাংশ ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা এবং ১৯ শতাংশ হার নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য কম রয়েছে পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের হারও ১৯ শতাংশ। তাইওয়ানের ওপর ২০ শতাংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ; জাপান, ইসরায়েল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৪১ শতাংশ শুল্কহার সিরিয়ার ওপর। বেশি হার আরোপ হওয়া দেশগুলোর মধ্যে লাওস ও মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ; সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩৯ শতাংশ; ইরাক ও সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ এবং লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আলজেরিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রকে কী দিচ্ছে বাংলাদেশ

সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্কহার প্রায় শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেশন পুরোপুরি মেনে চলারও অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে দাম বেশি দিয়ে হলেও বছরে সাত লাখ টন করে গম কেনা হবে পাঁচ বছর ধরে। ইতিমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।

দেশটি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আগে থেকেই আমদানি করা হচ্ছে। তা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আর যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনার সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৯ থেকে ১১ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় সফল না হওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য বেশি আমদানি করে, সেসব পণ্যের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ১৭ থেকে ২৩ জুলাই সপ্তাহব্যাপী অনলাইনে বৈঠক করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়েই তিনি বৈঠকগুলো করেন।

গত ১৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (প্রকাশ না করার চুক্তি) করার কারণে সরকারি প্রতিনিধিদলে অন্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ভেতরে-ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।

সরকারের আহ্বানে সফরের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে। এসব সভায় তাৎক্ষণিকভাবে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সয়াবিনবীজ ও তুলা আমদানির সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করেন তাঁরা। বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৪ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির এমওইউ হয়েছে। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ১৩ কোটি ডলারে ৩ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির এমওইউ করেছেন।

ডেলটা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রায় ১০ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানির এমওইউ করেছেন।

এ ছাড়া ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ১৯ হাজার টন তুলা আমদানির সমঝোতার চুক্তি করেছে বস্ত্র খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কার্গিল ইনকরপোরেটের কাছ থেকে এশিয়া কম্পোজিট ১ কোটি ২০ লাখ ডলারে ৬ হাজার টন আমদানির এমওইউ করেছে। একই দরে একই পরিমাণ তুলা আমদানির এমওইউ করেছে সালমা গ্রুপও। এ ছাড়া মোশাররফ গ্রুপ মার্কিন লুইস ড্রেফাস গ্রুপ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ৭ হাজার টন তুলা আমদানির এমওইউ করেছে।

কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্কহার ঠিক করতে পেরেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, এটাই হচ্ছে প্রধান কারণ।’

ট্রেড ইউনিয়ন, মজুরি, শ্রমিক নিপীড়ন, মামলা—এসব বিষয় আলোচনায় উঠেছিল কি না, জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে। শ্রম অধিকার সমুন্নত রাখতে জোর দিয়েছে তারা। আমরা আইএলও কনভেনশন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এ জন্য শ্রম আইন সংশোধনের কাজ চলছে।’

‘অত্যন্ত স্বস্তিকর ঘটনা’

ওয়াশিংটনে দর-কষাকষিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্ক কমার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, তাতে বাংলাদেশ বড় ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘সময়সীমার মধ্যেই জটিল আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। নইলে ৩৫ শতাংশের গুরুভার বহন করে যেতে হতো।’

খলিলুর রহমান আরও বলেন, প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান অথবা যত্সামান্য বেশি এবং ভারতের চেয়ে ৫ শতাংশ কম হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য এখন প্রতিযোগিতামূলক থাকবে। তৈরি পোশাকশিল্প ও এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত স্বস্তিকর ঘটনা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল বাণিজ্য উপদেষ্টার উদ্দেশে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনায় তিনি (শেখ বশিরউদ্দীন) সমালোচকদের হতাশ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। আল্লাহ তাঁকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন, যাতে তিনি দেশকে সেবা দিতে পারেন, হোক তা সরকারে বা বেসরকারি খাতে।’

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কহার ২০ শতাংশে আনা রপ্তানি খাতের জন্য একটি ইতিবাচক ও স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ। তবে আশাব্যঞ্জক হলেও আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই, বরং এটি একটি সুযোগ এবং একই সঙ্গে সতর্কবার্তা। বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে একটি বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক ও সহনশীল বাণিজ্যকৌশল প্রতিষ্ঠা করা যায়।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির প্রথম আলোকে বলেন, একটি বিশ্বশক্তির চাপের মুখে এই সাফল্য অর্জনের জন্য সরকার ও আলোচক দলের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন। এটি সম্ভবত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে কঠিন লড়াইগুলোর একটি ছিল, যা পরিপক্বতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন তাঁরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ