ছেলেকে প্রকৌশলী বানানোর স্বপ্ন পুড়েছে বেইলি রোডের আগুনে
Published: 28th, February 2025 GMT
নাজমুল ইসলামকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল বাবা নজরুল ইসলামের—ছেলে দেশে প্রকৌশল বিদ্যা শিখে বিদেশে যাবে উচ্চশিক্ষার জন্য। সে স্বপ্ন পুড়েছে রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে।
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন মারা যান। তাদেরই এক জন নাজমুল ইসলাম।
নাজমুলের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। রাজধানীর বনশ্রীর সি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের একটি বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন নাজমুল। পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে গ্রিন কোজি কটেজের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আগুনে নাজমুল এবং তার এক বন্ধু মারা যান।
নজরুল ইসলাম বলেছেন, “আমার চার ছেলেই মেধাবী। সবাই মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে পড়েছে। এরপর নাজমুল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ছেলেটা যেমন মেধাবী ছিল, তেমনি ভালো মানুষ ছিল। মিশুক ছিল, যে কারোরই মন আকর্ষণ করতে পারত। আশা ছিল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলে বিদেশে পাঠাব। ভালো ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু তা আর হলো না।”
তিনি বলেন, “যাদের কারণে আমার মতো অনেকে স্বজন হারিয়েছি, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। যেন আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। যেন সুষ্ঠু বিচার হয়, তা না হলে আরো মায়ের কোল খালি হবে।”
অগ্নিকাণ্ডের দিনের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, “বৃহস্পতিবার ভার্সিটিতে টেস্ট পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সাথে খেতে যায় নাজমুল। ওর বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পেরেছি, খাবার অর্ডার করে বসে ছিল তারা। আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে রেস্টুরেন্ট থেকে নাজমুলের এক বন্ধু বের হয়। সে আমাদেরকে আগুন লাগার সংবাদ দেয়। আমরা গিয়েছিলাম একটা দাওয়াতে। আমার ছেলে এবং তার বন্ধু আগুনে এমনভাবে পুড়েছে যে, গায়ে চামড়া ছিল না। ১২ দিন পর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বুঝে পাই।”
নাজমুলকে হারানোর শোকে পাগলপ্রায় তার মা হাসিনা বেগম। নজরুল ইসলাম বলেন, “ছেলের শোকে ওর মা পাগল হয়ে গেছে প্রায়। মরার আগেই মরে গেছে।”
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন মারা যান। জীবিত উদ্ধার করা হয় ৭৫ জনকে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ জন শিশু। এ ঘটনায় রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পর এখন মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নজর ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫