নাজমুল ইসলামকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল বাবা নজরুল ইসলামের—ছেলে দেশে প্রকৌশল বিদ্যা শিখে বিদেশে যাবে উচ্চশিক্ষার জন্য। সে স্বপ্ন পুড়েছে রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে।

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন মারা যান। তাদেরই এক জন নাজমুল ইসলাম।

নাজমুলের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। রাজধানীর বনশ্রীর সি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের একটি বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন নাজমুল। পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে গ্রিন কোজি কটেজের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আগুনে নাজমুল এবং তার এক বন্ধু মারা যান।

নজরুল ইসলাম বলেছেন, “আমার চার ছেলেই মেধাবী। সবাই মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে পড়েছে। এরপর নাজমুল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ছেলেটা যেমন মেধাবী ছিল, তেমনি ভালো মানুষ ছিল। মিশুক ছিল, যে কারোরই মন আকর্ষণ করতে পারত। আশা ছিল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলে বিদেশে পাঠাব। ভালো ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু তা আর হলো না।”

তিনি বলেন, “যাদের কারণে আমার মতো অনেকে স্বজন হারিয়েছি, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। যেন আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। যেন সুষ্ঠু বিচার হয়, তা না হলে আরো মায়ের কোল খালি হবে।”

অগ্নিকাণ্ডের দিনের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, “বৃহস্পতিবার ভার্সিটিতে টেস্ট পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সাথে খেতে যায় নাজমুল। ওর বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পেরেছি, খাবার অর্ডার করে বসে ছিল তারা। আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে রেস্টুরেন্ট থেকে  নাজমুলের এক বন্ধু বের হয়। সে আমাদেরকে আগুন লাগার সংবাদ দেয়। আমরা গিয়েছিলাম একটা দাওয়াতে।  আমার ছেলে এবং তার বন্ধু আগুনে এমনভাবে পুড়েছে যে, গায়ে চামড়া ছিল না। ১২ দিন পর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বুঝে পাই।”

নাজমুলকে হারানোর শোকে পাগলপ্রায় তার মা হাসিনা বেগম। নজরুল ইসলাম বলেন, “ছেলের শোকে ওর মা পাগল হয়ে গেছে প্রায়। মরার আগেই মরে গেছে।”

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন মারা যান। জীবিত উদ্ধার করা হয় ৭৫ জনকে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ জন শিশু। এ ঘটনায় রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পর এখন মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নজর ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ