বাংলাদেশকে আঞ্চলিক এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে
Published: 1st, March 2025 GMT
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেছেন, বাংলাদেশকে আঞ্চলিক এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়ে তুলতে বেবিচক ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ লক্ষ্যে বিমানবন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন, টার্মিনাল সম্প্রসারণ এবং এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
শনিবার যশোরের আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে হেলিকপ্টারে রোগী পরিবহন সেবা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি শাহ্ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকায়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং সৈয়দপুরসহ অন্যান্য আঞ্চলিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এভিয়েশন খাতের এ উন্নয়ন যাত্রীসেবা, কার্গো পরিবহন এবং বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি আরও সহজ করবে। একইসঙ্গে, বিনিয়োগ, পর্যটন, বাণিজ্য ও জরুরি সেবায় বিমান চলাচলের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হবে। এটি দেশের সার্বিক এভিয়েশন খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবায় আদ্ দ্বীনের এই সেবা কার্যক্রমের প্রশংসা করে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, খুলনা বিভাগের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের বিনামূল্যে রোগী পরিবহন সেবা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ সংকটাপন্ন অসচ্ছল রোগীদের দ্রুত ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে কোনো প্রতিষ্ঠান এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলে সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, জরুরি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন করে ইমপ্রেস এভিয়েশন পরিচালিত আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন ইবষষ ৫০৫ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে এই সেবা চালু করেছে, যা মানবতার সেবায় এক বিশাল অগ্রগতি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবার অঙ্গীকার নিয়ে দেশে ৮টি হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করছে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন। এরই অংশ হিসেবে আদ-দ্বীনের স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী সংযোজন হেলিকপ্টারযোগে বিনামূল্যে রোগী পরিবহনসেবা। যশোর আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনার আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মিত হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার দুটি অবতরণ করবে। সেখান থেকে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৮টি হাসপাতালে জরুরি রোগী স্থানান্তরের সেবা পাবে। খুলনা বিভাগের চিহ্নিত ৫৮৭টি স্পটে হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারবে।
আদ-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।