নিখোঁজ স্কুলছাত্রীকে রাতে উদ্ধার করে পুলিশ, ভোরে মিলল ঝুলন্ত লাশ
Published: 4th, March 2025 GMT
এক স্কুলছাত্রী নিহত হওয়ায় সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার মা। দিবাগত রাত ১২টার দিকে পুলিশ ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। তবে ভোরে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তার লাশ।
আজ মঙ্গলবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া এলাকা থেকে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত স্কুলছাত্রীর নাম ইয়াসমিন আক্তার। সে ওই এলাকার আবদুল হাকিমের মেয়ে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ইয়াসমিন।
পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার বিকেলে ইয়াসমিন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় তার মা বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় জিডি করেন। তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে একই এলাকার একটি বাড়িতে ইয়াসমিন রয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধারের পর দিবাগত রাত ১২টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
ভোররাত চারটার দিকে ইয়াসমিনকে কক্ষে রেখে রান্না করছিলেন তার মা। ফিরে এসে তিনি দেখেন, ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে মেয়ের লাশ ঝুলছে। খবর পেয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে লাশটি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে রাতে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় জিডি প্রত্যাহার করা হয়। এর মধ্যেই তাঁরা ফ্যানের সঙ্গে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ ঝুলে থাকার খবর পান। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক বিষয়ে মনোমালিন্য থেকে ওই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে এটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।