রামগঞ্জে যুবদলের কমিটি নিয়ে বিরোধ কাটছে না, একাংশের বিক্ষোভ মিছিল
Published: 4th, March 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ কাটছে না। কমিটি ঘোষণার পর দলের ভেতরে বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে রামগঞ্জ পৌর শহরে কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন যুবদলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। বিক্ষোভে কয়েক শ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরের পর যুবদলের নেতা-কর্মীরা রামগঞ্জ শহরের সোনাপুর চৌরাস্তায় জড়ো হন। এ সময় তাঁরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন। পরে রামগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন ওরফে পলাশের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা জেলা যুবদলের নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নূর প্লাজা চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গত শনিবার কবির হোসেনকে রামগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও আবদুল সাত্তার মজুমদারকে সদস্যসচিব করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া জামাল হোসেনকে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ও মিজানুর রহমানকে সদস্যসচিব করে ৩৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। এরপর ওই দিনই উপজেলা ও পৌর যুবদলের নবগঠিত এই কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন নেতা-কর্মীরা।
রামগঞ্জের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন রামগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন, পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মো.
গিয়াস উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, যাঁরা ১৭ বছর দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন, মামলা-হামলা ও মাসের পর মাস জেলে ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই পকেট কমিটি নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য করা এ কমিটি অবিলম্বে বাতিল না করলে রামগঞ্জ যুবদলের নেতা-কর্মীরা গণপদত্যাগ করবেন।
শনিবার লক্ষ্মীপুরে যুবদলের ১১টি শাখার নতুন আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রকাশ করা হয়।
এসব কমিটির অনুমোদন দেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম লিটন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ রশিদুল হাসান লিংকন ও সদস্যসচিব আবদুল আলিম হুমায়ুন।
জানতে চাইলে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম লিটন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়টি শুনেছি। বিগত আন্দোলন–সংগ্রামে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। সংগঠনকে গতিশীল করতে তাঁরা সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা–কর্মীরা আগামী তিন মাসের মধ্যে তাঁদের অধীন সব শাখার সম্মেলন শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র মগঞ জ উপজ ল প র য বদল র য বদল র ন কর ম র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল