কোরআনে এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলোর তিলাওয়াত করলে বা শুনলে মুমিন পাঠক ও শ্রোতাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করতে হয়। এই সিজদাকে সিজদায়ে তিলাওয়াত বলা হয়।
তিলাওয়াত শব্দ করে বা নিঃশব্দে যেভাবেই করা হোক না কেন, সিজদা করতেই হবে। তবে একই আয়াত বারবার পড়লে তিলাওয়াত শেষে একবার সিজদা করলে যথেষ্ট হবে। এই সিজদা ফরজ নয়, ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে।
তিলাওয়াতে সিজদার পদ্ধতি হলো, হাত না উঠিয়ে দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সোজা সিজদায় চলে যেতে হবে এবং সুবহানা রাব্বিয়াল আলা তিনবার পড়ে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়াতে হবে। সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে তাশাহ্হুদ নেই, সালামও নেই। এ সিজদার জন্য হাত ওঠাতে বা হাত বাঁধতে হবে না এবং দুটি সিজদাও করতে হবে না। যদি না দাঁড়িয়ে বসে বসে সিজদা করে অথবা সিজদা করে বসে থাকে তাও জায়েজ আছে। পুরুষদের জন্য আল্লাহু আকবর জোরে বলা উত্তম।
আরও পড়ুনফেরেশতারা কোরআন তিলাওয়াত শুনতে এল১২ এপ্রিল ২০২৪হজরত আবু হুরায়রা (রা.
তিলাওয়াতে সিজদা আদায়ের নিয়ম
তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা খুবই সহজ। সোজা দাঁড়ানো থেকে হাত না উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় চলে যেতে হবে। তারপর সিজদার তাসবিহ ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ তিনবার পড়তে হবে। আবার আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে গিয়ে শুধু একটি সিজদা দিতে হবে। নামাজের মতো দুটি সিজদা দিতে হবে না। নামাজের মতো সিজদা থেকে বসতেও হবে না। তাশাহুদ, দরুদ শরিফ কিছু পড়তে হবে না। এমনকি তিলাওয়াতে সিজদায় সালামও ফেরাতে হয় না।
তিলাওয়াতের সিজদায় পড়ার দোয়া
নবী (সা.) তিলাওয়াতের সিজদায় গিয়ে দোয়া পড়তেন। সেই দোয়াটি পড়া যায়। দোয়াটি হলো, ‘সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাজি খালাকাহু, ওয়া শাক্কা সামআহু, ওয়া বাসারাহু বিহাওলিহি ওয়া কুওয়াতিহি।
এর অর্থ, সেই মহান রবের উদ্দেশ্যে আমার মুখমণ্ডল সিজদা করল, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং নিজের প্রবল ক্ষমতায় তার মাঝে শোনার শক্তি ও দেখার শক্তি দান করেছেন।
হজরত আয়েশা (রা) বলেন, রাতে নবী (সা.) সিজদার আয়াত পাঠ করার পর সিজদায় এই দোয়া বলতেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪২৫)
আরও পড়ুনরাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার কারণ১২ এপ্রিল ২০২৪তিলাওয়াতে সিজদা চেনার উপায়
পবিত্র কোরআনের যেসব আয়াতে সিজদার বিধান রয়েছে, সেসব আয়াতের ওপরে লম্বা দাগ টেনে চিহ্ন দেওয়া আছে। এ রকম সিজদার আয়াত চৌদ্দটি। এ চৌদ্দটি সিজদার পারা, সুরা, আয়াত নম্বর এবং বাংলা উচ্চারণ আলোচনা করা হলো।
সিজদা ১:
কোরআনের প্রথম সিজদাটি নবম পারায় সুরা আরাফের ২০৬ নম্বর আয়াতে রয়েছে। উক্ত আয়াতের বাংলা উচ্চারণ, ‘ইন্নাল্লাজিনা ইংদা রাব্বিক্বা লা-ইয়াসতাকবিররুনা আন ইবাদাতিহি ওয়া ইয়ু সাব্বিহুনাহু ওয়া লাহু ইয়াসজুদুন।’
সিজদা ২:
কোরআনের দ্বিতীয় সিজদা রয়েছে ১৩ পারায় সুরা রাদের ১৫ নম্বর আয়াতে। আয়াতের বাংলা উচ্চারণ, ‘ওয়া লিল্লাহি ইয়াসজুদু মাং ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি তও আউ ওয়া কারহাও ওয়া জিলালুহুম বিলগুদুওয়ি ওয়াল আ-ছা-ল।’
সিজদা ৩:
১৪ পারায় সুরা নাহলের ৫০ নম্বর আয়াতে তৃতীয় সিজদাটি রয়েছে। উক্ত আয়াতের বাংলা উচ্চারণ, ‘ইয়াখা-ফুনা রাব্বাহুম্ মিন ফাওক্বিহিম্ ওয়া ইয়াফ'আল্না মা- ইউ'মারুন
আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কেন পড়ব২৪ মার্চ ২০২৪সিজদা ৪:
কোরআনের চতুর্থ সিজদাটি ১৫ নম্বর পারায় সুরা বনি ইসরাইলের ১০৭-১০৯ আয়াতসমূহে বিদ্যমান। বাংলা উচ্চারণ, ‘কুল আ-মিনুবিহী আও লা তু’মিনু। ইন্নাল্লাজিনা উ-তুল ইলমা মিং ক্বাবলিহী ইযা ইয়ুতলা আলাইহিম ইয়াখিররুনা লিলআযক্বানি স্জ্জুাদা। ওয়াকুলুনা সুবহানা রাব্বিনা ইং কানা ওয়াদু রাব্বিনা লামাফউলা। ওয়া ইয়াখিররুনা লিল আযক্বানি ইয়াবকুনা ওয়া ইয়জিদুহুম খুশুআ।’
সিজদা ৫:
পঞ্চম সিজদাটি ১৭ নম্বর পারায় সুরা মারইয়ামের ৫৮ নম্বর আয়াতে রয়েছে। এর বাংলা উচ্চারণ, ‘উলাইকাল্লাজিনা আনআমাল্লাহ আলাইহিম মিনান নাবিয়্যিনা মিন জুররিইইয়াতি আ-দামা ওয়া মিম্মান হামালনা মাআ নুহ। ওয়া মিন জুররিয়্যাতি ইবরাহিমা ও ইসরাইলা। ওয়া মিম্মান হাদাইনা ওয়াজতাবাইনা। ইজা তুতলা আলাইহিম আ-ইয়া-তুররহমানি খাররু সুজ্জাদাওয়্যা বুকিইয়্যা।’
সিজদা ৬:
পবিত্র কোরআনের ৬ নম্বর তিলাওয়াতে সিজদাটি রয়েছে ১৭ নম্বর পারার সুরা হজের ১৮ নম্বর আয়াতে। এর বাংলা উচ্চারণ, ‘আলামতারা আন্নাল্লাহা ইয়াসজুদ লাহু মান ফিসসামাউয়াতি ওয়া মান ফিল আরদ্বি ওয়াশ্শামসু ওয়াল কামারু ওয়ান্নুজুমু ওয়াল জিবালু ওয়াশ্শাজারু ওয়াদ্দাওয়া-ব্বু ওয়া কাছিরুম মিনান্নাসি। ওয়া কাছিরুন হাক্কা আলাইহিল আজাব। ওয়া মাইয়্যুহিনিল্লাহু ফামা লাহু মিম্মুকরিমিন। ইন্নল্লাহা ইয়াফআলু মা ইয়াশাউ।’
সিজদা ৭:
১৯ নাম্বার পারায় সুরা ফুরকানের ৬০ নম্বর আয়াতে রয়েছে সপ্তম সিজদাটি। উক্ত আয়াতের বাংলা উচ্চারণ, ‘ওয়া ইজা কিলা লাহুমুসজুদু লিররামানি কালু ওয়া মাররাহমানু। আনাসজুদু লিমা তা’মুরুনা ওয়া জা দাহুম নুফুরা।’
আরও পড়ুনসিজদার যত উপকারিতা১৪ জানুয়ারি ২০২৪সিজদা ৮:
৮ নম্বার তিলাওয়াতে সিজদাটি ১৯ নম্বর পারায় সুরা নামলের ২৫-২৬ আয়াতে রয়েছে। আয়াত দুটির বাংলা উচ্চারণ, ‘আল্লা ইসজুদু লিল্লাহিল্লাজি ইয়ুখরিজুল খাবআ ফিসসামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়া ইয়া’লামু মা তুখফুনা ওয়া মা তু’লিনুন। আল্লাহু লা-ইলাহ ইল্লা হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।’
সিজদা ৯:
নবম সিজদাটি ২১ পারায় সুরা সিজদার ১৫ নম্বর আয়াতে। উক্ত আয়াতের বাংলা উচ্চারণ, ‘ইন্নামা ইউ’মিনু বিআ-য়া-তিনাল্লাজিনা ইযা যুক্কিরু বিহা খাররু সুজ্জাদাওয়া সাব্বাহু বিহামদি রাব্বিহিম ওয়া হুম লা ইয়াসতাকবিরুন।’
সিজদা ১০:
১০ নম্বর তিলাওয়াতে সিজদাটি ২৩ পারায় সুরা সোয়াদের ২৪ নম্বর আয়াতে রয়েছে। উক্ত আয়াতের বাংলা উচ্চারণ, ‘ক্বালা লাকাদ জালামাকা বসুআলি না’জাতিকা ইলা নি’জিহি। ওয়া ইন্না কাছিরাম মিনাল খুলাতা-ই লায়াবগি বা’দুহুম আলা বা’দিন ইল্লাল্লাজিনা আ-মানু ওয়া আমিলুসসালিহাতি ওয়া ক্বালিলুম্মা হুম। ওয়া জন্না দা-উদু আন্নামা ফাতান্নাহু ফাসতাগফারা রাব্বাহু ওয়া খাররা রাকিআওয়া আনাবা।’
সিজদা ১১:
পবিত্র কোরআনের ১১ নম্বর সিজদাটি ২৪ পারায় সুরা হা-মিম সিজদার ৩৭-৩৮ নম্বর আয়াতসমূহে আছে। আয়াত দুটির বাংলা উচ্চারণ, ‘ওয়ামিন আয়াতিহিল লাইলু ওয়ান্নাহারু ওয়াশশামসু ওয়াল কামারু। লা তাসজুদু লিশশামসি ওয়া লা লিলকামারি ওয়াসজুদু লিল্লাহিল্লাজি খালাকাহুন্না ইনকুনতুম ইয়্যাহু তা’বুদুন। ফা ইনিসতাকবারু ফাল্লাজিনা ইনদা রাব্বিকা ইয়ু সাব্বিহুনা লাহু বিললাইলি ওয়ান্নাহারি ওয়াহুম লা ইয়াসমাউন।’
সিজদা ১২:
১২ নম্বার তিলাওয়াতে সিজদাটি ২৭ পারায় সুরা নাজমের ৬২ নম্বর আয়াতে রয়েছে। আয়াতটির বাংলা উচ্চারণ, ‘ফাসজুদু’ লিল্লাহি ওয়া’বুদু।’
সিজদা ১৩:
৩০ পারায় সুরা ইনশিকাকের ২১ নম্বর আয়াতে রয়েছে ১৩ নম্বর সিজদাটি। আয়াতটির বাংলা উচ্চারণ: ওয়া ইজা কুরিআ আলাইহিমুল কুরআনু লা ইয়াসজুদুন।
সিজদা ১৪:
পবিত্র কোরআনের সর্বশেষ সিজদাটিও ৩০ পারায় সুরা আলাকের ১৯ নম্বর আয়াতে রয়েছে। আয়াতের বাংলা উচ্চারণ ‘কাল্লা, লা তুতি’হু ওয়াসজুদ ওয়াকতারিব।’
এই চৌদ্দটি আয়াত যখন তিলাওয়াত করা হবে, তখন তিলাওয়াতকারীর ওপর সিজদা ওয়াজিব হবে। তিলাওয়াতকারীর ওপর যেমন সিজদা করা ওয়াজিব হবে, তেমনি আয়াতগুলো অন্য কেউ শুনলে তাঁর জন্যও সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এ জন্যই সিজদার আয়াত চুপি চুপি তিলাওয়াত করা উত্তম। যাতে অপর কোনো ব্যক্তিকে অসুবিধায় পড়তে না হয়।
আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কেন পড়ব২৪ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রআন র র জন য আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?