৭৯ স্ট্রাইক রেটের আগা সালমানই কেন পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক
Published: 5th, March 2025 GMT
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে স্বাগতিক পাকিস্তানের ভরাডুবির পরই গুঞ্জনটা শুরু হয়েছিল। দল থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান-বাবর আজমের মতো শীর্ষ তারকারা।
গুঞ্জনটা শেষ পর্যন্ত আংশিক সত্যি হয়েছে। আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা ধরে রাখলেও টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়েছেন রিজওয়ান ও বাবর। পেসার নাসিম শাহকেও টি-টোয়েন্টির দলে রাখা হয়নি।
রিজওয়ানকে গত অক্টোবরে সাদা বলের দুই সংস্করণের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া, এমনকি দল থেকেই বাদ দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে সামনে আনা হচ্ছে রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট।
সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে নেমে পাওয়ারপ্লে কাজে লাগাতে পারেননি এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। কারও কারও ধারণা, প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই বল ‘গিলে ফেলেছেন’ রিজওয়ান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও কচ্ছপগতিতে রান তোলায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।
কিন্তু রিজওয়ানের পরিবর্তে যাঁকে পাকিস্তানের নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হলো, সেই আগা সালমান আদৌ এ সংস্করণে খেলার যোগ্য কি না, এমন প্রশ্নও উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সালমানের স্ট্রাইক রেট যে মাত্র ৭৯.
৬ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সালমানের মোট রান ৫০। তিনবারই আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে। সর্বোচ্চ ৩২ রানের ইনিংসটা অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে বিস্ময়কর মনে হলেও সত্যি, টি-টোয়েন্টির চেয়ে ওয়ানডেতেই তাঁর স্ট্রাইক রেট বেশি—৯৮.৮৮।
তাই পাকিস্তানের যেকোনো সমর্থক প্রশ্ন করতে পারেন, এত খেলোয়াড় থাকতে সালমানকেই কেন পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বে আনা হলো, যিনি ব্যাট হাতে টি-টোয়েন্টির দাবিই মেটাতে পারেন না!
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক—
১ 》অক্টোবরে রিজওয়ানকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক বানানোর দিনেই সালমানকে এই দুই সংস্করণের সহ-অধিনায়ক বানানো হয়। যেহেতু অধিনায়ক রিজওয়ান দল থেকে বাদ পড়েছেন, তাই নিয়ম অনুযায়ী সহ-অধিনায়ক সালমানেরই নেতৃত্বে আসার কথা।
রিজওয়ান বিশ্রামে থাকায় টি-টোয়েন্টিতে এরই মধ্যে পাকিস্তানকে চার ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩১ বছর বয়সী সালমান। ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের মাটিতে তাঁর অধিনায়কত্বে পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতেছে। সেই সিরিজেই সালমানকে দেখে পিসিবির হর্তাকর্তাদের মনে হয়েছে, দলের নেতা হওয়ার সব গুণ তাঁর মধ্যে রয়েছে। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও বোলিংয়ে মোটামুটি ভালো করেছেন। ২ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ২ উইকেট। ইকোনমি রেট ৫.২০।
২ 》রিজওয়ানের সঙ্গে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বাবর আজমেরও টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়া। আবার বাবরকে রাখা হলেও তিনি যে নতুন করে অধিনায়কের দায়িত্ব নিতেন, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। গত দুই বছরে দুবার পাকিস্তানের নেতৃত্ব ছেড়েছেন বাবর। বোঝাই যাচ্ছে, আবারও অধিনায়ক হওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই।
৩ 》রিজওয়ান-বাবরের অনুপস্থিতিতে অধিনায়ক হতে পারতেন আরেক অভিজ্ঞ ফখর জামান। দারুণ ফর্মে থাকা সাইম আইয়ুবেরও নাম শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুজনই চোট থেকে সেরে ওঠার লড়াইয়ে আছেন। ফখর চোটে পড়েছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে। আর জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গোড়ালিতে চোট পেয়ে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে পড়া আইয়ুব উন্নত চিকিৎসা নিতে গেছেন লন্ডনে।
৪ 》প্রায় ৯ মাস পর পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার শাদাব খান। শাদাবের নেতৃত্বে গত বছর পিএসএলে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। কিন্তু লম্বা সময় পর জাতীয় দলে ফিরেই শাদাবকে অধিনায়কত্বের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া উচিত হবে না বলে মনে হয়েছে পিসিবির। এ কারণে নিউজিল্যান্ড সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাঁকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
৫》পিসিবির জন্য আরেকটি বিকল্প ছিলেন শাহিন আফ্রিদি। কিন্তু অধিনায়ক আফ্রিদিকেও বাজিয়ে দেখা হয়ে গেছে। গত বছর তাঁর নেতৃত্বেই নিউজিল্যান্ডে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে পাকিস্তান। সিরিজটি তারা হেরেছে ৪-১ ব্যবধানে। আফ্রিদিকে অধিনায়ক হিসেবে রাখা না–রাখা নিয়েও জল কম ঘোলা হয়নি। অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার পর পিসিবি তাঁকে সহ-অধিনায়ক করতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। তা ছাড়া শাহিন আফ্রিদির শ্বশুর শহীদ আফ্রিদিও তাঁকে অধিনায়কত্বের বাড়তি দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স করণ র জওয় ন দল থ ক ন ব বর
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব