ত্বকী হত্যার ১২ বছর পূর্ণ হলো। একই সঙ্গে বিচারহীনতারও এক যুগ। পেছনে তাকিয়ে ভাবি, কীভাবে এক যুগ কেটে গেল!

২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে আমার পুত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণ করা হয়েছিল। ওই রাতেই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে র‍্যাব ১১-কে চিঠি দিয়েছিলাম।

দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর খালের পাড় থেকে পুলিশ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে। ওই রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে হত্যা মামলা করি। এর ৫ দিন পর শামীম ওসমানের ভাই নাসিম ওসমান ও তার ছেলে আজমেরী ওসমানের একটি ফোনালাপের মাধ্যমে আমরা এ হত্যার কারণ ও ঘাতক সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৮ মার্চ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ত্বকী হত্যার জন্য শামীম ওসমানসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অবগতিপত্র দিই। কিন্তু তদন্তে ওসমান পরিবারের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে পুলিশ এ মামলা নিয়ে অগ্রসরে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৮ মে র‍্যাব মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন এবং ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত ভ্রমর নামে দু’জন ঘাতক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায়– ত্বকীকে কখন, কীভাবে, কোথায়, কারা, কেন হত্যা করেছে। বর্ণনা অনুযায়ী অপহরণের রাতেই তারা আল্লামা ইকবাল রোডের টর্চার সেলে আজমেরী ওসমানের উপস্থিতিতে ও নির্দেশে ত্বকীকে রাত ১২টার আগেই হত্যা করেছে। 

ত্বকী হত্যার ১২ বছরের মধ্যে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর শেখ হাসিনার সরকার ও প্রশাসন ত্বকীর ঘাতকদের নিরাপত্তা দিয়ে গেছে। অন্যদিকে বিচার চাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য শামীম ওসমান ত্বকী হত্যার বিচারপ্রার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের ওপর হামলা করে, মামলা দিয়ে নির্যাতনের বিভিন্ন পথ বেছে নিয়েছিল। শামীম ওসমান নিজের দলীয় ক্যাডার, নিজ স্ত্রী, মামাশ্বশুরসহ বিভিন্ন আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা করিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের দিয়েও মামলা করিয়েছে। 

ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে বিশ্বের ২৩টি দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। এ বিচারের দাবিতে টানা ১২ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, আলোক প্রজ্বালন, গোলটেবিল বৈঠক, প্রতীক অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশের লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা প্রতিনিয়ত লেখালেখি, কবিতা, ছবি আঁকা, গান রচনা, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ, স্মারকগ্রন্থ, গান ও আবৃত্তির সিডি প্রকাশসহ বিভিন্নভাবে এ হত্যার বিচার চেয়েছেন। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ ত্বকীর লাশ পাওয়ার তারিখকে কেন্দ্র করে ১২ বছর ধরে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি, দলীয় নেতাদের শেখ হাসিনা বলেছেন, কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে তিনি জানেন। গোয়েন্দা সংস্থার সব রিপোর্ট তাঁর কাছে আছে। তার পরও সত্য হচ্ছে, তিনি এ বিচারটি করেননি, বরং নির্দেশ দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলেন। 

৫ আগস্ট সরকার বদলের পর মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। নতুন করে ছয়জন ঘাতক গ্রেপ্তার হয়েছে; কাজল হাওলাদার নামে একজন ঘাতক ১৬৪ ধারায় শিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সে আগের জবানবন্দি দেওয়া ঘাতকদের মতোই একইভাবে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যার বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। 
তদন্তে উঠে এসেছে শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ছেলে, ভাতিজা, দলীয় ক্যাডাররা মিলে তাদেরই টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যা করেছে।

আমরা চাই ত্বকী হত্যার তদন্তকাজ এখন দ্রুত শেষ করে নির্দেশদাতাসহ সব অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার শেষ করা হোক। এভাবে কোনো হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে, সে বাস্তবতা তৈরি হোক। আইনের স্বাধীনতা তৈরি হোক।

রফিউর রাব্বি: তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ম ম ওসম ন ন র য়ণগঞ জ ওসম ন র ১২ বছর তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যকরী কমিটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যকরী কমিটির   ২০২৪ -২০২৬  প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে সংগঠনের সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলে’র  সভাপতিত্বে এবং  সাধারণ সম্পাদক আশু আশরাফুলের সঞ্চালনায় আলী আহমদ চুনকা নগর পাঠাগারে প্রানবন্ত এবং আনন্দমুখর পরিবেশে  এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় উক্ত কমিটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আলোচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে যে সকল সিন্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জেলা কমিটির সদস্য সংগ্রহ,উপজেলা কমিটি গঠন,আঞ্চলিক সমস্যার মধ্যে যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা নিরসন,শব্দ দূষণ,  বায়ু দূষণ ও নদী দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে  বিশেষ ভূমিকা পালন করা সহ আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। 

সুজন এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সভাপতির নেতৃত্বে ১২ নভেম্বর সুজনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে  পালন করা হবে।  সকাল ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হতে শোভাযাত্রা এবং  র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে কেক কাটার মধ্যে দিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হবে। এই সময় সুজনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহিদুল ইসলাম টিটু, সহ-সভাপতি এম আর হায়দার রানা, অর্থ সম্পাদক রাজলক্ষ্মী, সদস্য এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ, সহ কমিটির আরো নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। ‘

আলোচনা শেষে সভাপতি, সকলের সু স্বাস্থ্য কামনা করে অনুষ্ঠান সমাপ্তি  ঘোষনা করেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তারুণ্যের চোখে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার
  • বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন না’গঞ্জ জেলা আঞ্চলিক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত
  • নির্বাচন আসলেই ধর্মকে ব্যবহারের চেষ্টা দেখা যায় : সালাহউদ্দিন আহমেদ
  • ফতুল্লায় গভীর রাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মশাল মিছিল, আটক ৫
  • নারীর মর্যাদা সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে সিদ্ধিরগঞ্জে মহিলাদলের উঠান বৈঠক
  • সাংবাদিক শাওনের মায়ের মৃত্যুতে বন্দর পেশাদার সাংবাদিক ফোরামের শোক
  • আজাদের নির্দেশে বিশনন্দী ইউনিয়নে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ
  • সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যকরী কমিটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত 
  • সাতক্ষীরায় ৮ দিনেও খোঁজ মেলেনি অপহৃত কিশোরীর
  • ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহরণ’, ফেনী থেকে মিলল কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ