শিক্ষকতায় ব্যস্ত চাঁদনী, ছুটি ছাড়া নেই অভিনয়ের শিডিউল
Published: 6th, March 2025 GMT
একাধারে তিনি মডেল, নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী ও শিক্ষক। কাজের পরিধি বাড়লেও খানিকটা বেছে বেছে কাজে হাত দিচ্ছেন। অনেকদিন পর লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে ফিরেছেন মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী। অনেক দিন ধরেই ক্যামেরার বাইরে ছিলেন। অভিনয়ের ইচ্ছা বরাবরই, ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। গত সপ্তাহে সেটি মিলে গেছে।
চাঁদনী বলেন, ‘‘আমার পছন্দের গল্পকার জিনাত হাকিমের গল্পে, অভিনেতা ও নির্মাতা আজিজুল হাকিমের পরিচালনায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। নাম ‘আমি তুমি ও সে’। আমরা ঢাকা ও পূর্বাচলের বিভিন্ন জায়গায় শুটিং করেছি। আমার সঙ্গে আরও আছেন দীপা খন্দকার, সমাপ্তি মাশুক। খুব মিষ্টি একটা গল্প। একক নাটকটি ঈদে টিভিতে দেখা যাবে।’’
অভিনয়ের সঙ্গে আরও কয়েকটি পেশায় যুক্ত হলেও বছর দুয়েক আগে ঢাকার সাঁতারকূলের গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষকতা করছেন চাঁদনী। দুই বছর হলো এই পেশায় জড়িয়েছেন। এখন সবকিছুর চেয়ে শিক্ষকতাই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই জানালেন, অন্য স্কুলের মতো এই স্কুল না। সব কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। কোনো প্রকার হাফ টাইম নেই। তাই প্রতিদিন স্কুল করার জন্য অভিনয়ে নিয়মিত হতে পারছেন না। ছুটির দিনগুলো ছাড়া অভিনয়ের শিডিউল দিতে পারেন না নির্মাতাদের। তবে শিক্ষকতা পেশা দারুণ উপভোগ করছেন।
চাঁদনীর কথায়, ‘বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে খুব ভালো লাগে। আমার স্কুলটি আন্তর্জাতিকমানের। আমি ফাইভ-বির ক্লাস টিচার। পাশাপাশি নৃত্যেরও শিক্ষক। সবকিছু মিলে দারুণ উপভোগ করছি। চাকরি না করলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত। এই যে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন, বাচ্চাদের দায়িত্ব, কলিগদের ভালোবাসা–এগুলো আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে। কলিগরা যে এক সময় পরিবারের অংশ হয়ে যায়, সেটি শিক্ষকতা করতে এসে বুঝেছি।’
চাঁদনী সময় পেলে ওটিটির কনটেন্ট দেখেন। ভালোও লাগে তাঁর। এই প্ল্যাটফর্মে এখনও কাজ করেননি তিনি। সময় ও গল্প মিলে গেলে অভিনয় করবেন। চাঁদনীর কথায়, ‘আমি অভিনয় করতে চাই। তবে স্কুলটা এখন প্রথম প্রাধান্যের জায়গা। শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকে। এই দুই দিনের শিডিউলে কোনো নির্মাতা যদি আমাকে নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে অভিনয় করতে রাজি। তবে প্রথম কাজ করার আগে একবার যাচাই-বাছাই তো করা উচিত।’
অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্য নিয়েও ব্যস্ত তিনি। সম্প্রতি ঢাকার বাইরে থেকে শো করে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘নাচ তো আমার সব। সবার আগে এটার কথা চিন্তা করি। শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে সম্প্রতি নরসিংদীতে শো করে এলাম। এছাড়া নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছি। সময়-সুযোগে ঢাকার ভেতর শো’তে অংশগ্রহণ করি। এভাবেই চলছে।’
শুধু নাটক নয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনে অতিথি হয়েছেন ‘ইফতারের রসুইঘর’-এ। রোজার বিশেষ এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন আরেক অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা আহমেদ। চাঁদনী বলেন, ‘আমি একটি পর্বে অতিথি হয়েছি। দারুণ লেগেছে, দর্শকের জন্য ইফতারের কয়েকটি রেসিপিও দেখিয়েছি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫