সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় তিন ঘণ্টা ধরে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ভারতীয় চোরাচালানের চিনি পাচারকারীদের কাছ থেকে পাওয়া চাঁদাবাজির টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত বুধবার বিকেলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও কারও নাম জানা যায়নি। তবে সংঘর্ষ থামাতে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার বেলা সাড়ে পাঁচটায় শুরু হওয়া সংঘর্ষ থেমে থেমে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, তামাবিল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায়ই ভারতীয় চিনিসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাই পণ্য সিলেট শহরে ঢোকে। তবে শহরে ঢুকতে গেলে দাসপাড়া এলাকাসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু ব্যক্তিকে চাঁদা দিতে হয়। কিছুদিন আগে দাসপাড়া এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী কয়েকটি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করে। এ টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই বুধবার সংঘর্ষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাদিমপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সায়েম এবং সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জুয়েলের ভাগনে নয়নের মধ্যে প্রথমে তর্কাতর্কি হয়। পরে এতে যুক্ত হন দাসপাড়া ও চকগ্রামবাসী। এ দুই গ্রামবাসীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধীরে ধীরে দুই গ্রামের পক্ষে-বিপক্ষে আশপাশের আরও তিনটি গ্রামের মানুষ যোগ দেন। পরে পাঁচ গ্রামের কয়েক শ মানুষ থেমে থেমে সংঘর্ষ চালান।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চললেও খুব বেশি মানুষ আহত হননি। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় রাতেই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। সংগঠনের জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল ও সদস্যসচিব শাকিল মোর্শেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শেষ করে এ ঘটনার মূল কারণ উদ্‌ঘাটন এবং সংঘর্ষের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ জড়িত কি না, তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।

একইভাবে জেলা ছাত্রদলও চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিকে সংঘর্ষের ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটন ও ছাত্রদলের কেউ জড়িত কি না, তা খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার রাতেই এ তথ্য জানানো হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র ঘটন য় ছ ত রদল র ক ও ছ ত রদল দল র ক তদন ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় মেয়ে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

বগুড়ায় কিশোরী মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় রিকশা চালক বাবাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসম্পাদক জিতু ইসলাম (৪২), তার সহযোগী শফিকুল হাসান বিপ্লব (২৮) এবং মতিউর রহমান মতি (৩০)।

এর আগে বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকার রিকশা চালক শাকিলের কিশোরী মেয়েকে (১৪) বিয়ের প্রস্তাব দেন জিতু ইসলাম। বয়স বেশি হওয়ায় শাকিল আহম্মেদ মেয়েকে জিতুর সাথে বিয়ে দিতে রাজী হননি। এর জের ধরে শনিবার দুপুরের পর জিতু ও তার লোকজন শাকিলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয় যায়। শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় করতোয়া নদীর ঘাটে জিতুকে মারপিট করে ফেলে রাখে তারা। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান শাকিল।

আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান বাসির। 

তিনি বলেন, “গতকাল রাতে নিহত শাকিলের স্ত্রী মালেকা বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ে করেছেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমরা আসামি ধরতে অভিযান পরিচালনা করি। সন্ধ্যা নাগাদই প্রধান অভিযুক্তকে আমরা গ্রেপ্তার করি। পরে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযান চালিয়ে রাতের মধ্যেই আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের আদালতে মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।”

এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জিতু ইসলামকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি নেতৃবৃন্দ জিতু ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঢাকা/এনাম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ