গৃহবধূর কাটা মাথা বাঁশঝাড়ের নিচে তামাকখেতে পুঁতে রাখা হয়: পুলিশ
Published: 10th, March 2025 GMT
লালমনিরহাট সদর থানার মোগলহাটের ফুলগাছ গ্রামের ভুট্টাখেত থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন গৃহবধূ হাসিনা বেগমের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে দাবি করেছে পুলিশ। আজ সোমবার দুপুরে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবির কথা জানানো হয়। দুই সতিনের পারিবারিক কলহের জেরে গৃহবধূকে হত্যা করে তাঁর কাটা মাথা বাঁশঝাড়ের নিচে তামাকখেতে পুঁতে রাখা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় পুলিশ।
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি নিহত গৃহবধূ হাসিনার স্বামী আশরাফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ৪ মার্চ রাত ৯টার দিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলগাছ গ্রামের শফিকুল ইসলামের ভুট্টাখেতে একাধিক ব্যক্তির সহায়তায় গৃহবধূ হাসিনা বেগমের শরীর থেকে মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে আশরাফুল তাঁর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে হাসিনার বিচ্ছিন্ন মাথা বাড়িতে নিয়ে যান এবং প্রথম স্ত্রী মেহেরুন্নেসাকে (৪৪) দেখান। ৫ মার্চ ভোরে বাড়ির পূর্ব দিকে ভারত সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের ভেতরে বাঁশঝাড়ের নিচে একটি তামাকখেতে কাটা মাথাটি পুঁতে রাখা হয়।
আরও পড়ুনলালমনিরহাটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গৃহবধূ হত্যা মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার০৯ মার্চ ২০২৫আশরাফুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মেহেরুন্নেসা ও দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা বেগমের মধ্যকার পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পেরেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরনবী, লালমনিরহাটের পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মোহাম্মদ সাদসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওসি মোহাম্মদ নুরনবী জানান, গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলামকে লালমনিরহাটের আদালতে সোপর্দ করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আরও পড়ুনলালমনিরহাটে মাথাবিহীন নারীর লাশের পরিচয় মিলেছে, স্বামী পলাতক০৭ মার্চ ২০২৫গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারীর দুর্গাপুরের দীঘলটারী গ্রামের বাসিন্দা। নিহত হাসিনা বেগম আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী। গত বুধবার দুপুরে মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের একটি ভুট্টাখেত থেকে মাথাবিহীন একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হাতের আঙুলের ছাপ থেকে রংপুরের সিআইডি পুলিশ নিশ্চিত করে, লাশটি আশরাফুলের স্ত্রী হাসিনা বেগমের।
ঘটনার পর থেকে আশরাফুল ও তাঁর প্রথম স্ত্রী মেহেরুন্নেসা উধাও হয়ে যান। গত শুক্রবার বিকেলে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ মেহেরুন্নেসাকে আটক করে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য সদর থানায় নিয়ে আসে। শনিবার মেহেরুন্নেসা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁর সতিন হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথা পুঁতে রাখার তথ্য দেন। সেই তথ্যানুযায়ী আদিতমারীর দুর্গাপুরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকার একটি তামাকখেতে পুঁতে রাখা অবস্থায় হাসিনার বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুনলালমনিরহাটে গৃহবধূ হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথা পাওয়া গেছে; সতিন গ্রেপ্তার, স্বামী পলাতক০৮ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আশর ফ ল ইসল ম সদর থ ন ব গম র গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।