ধর্ষণ মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করতে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি, জানালেন আইন উপদেষ্টা
Published: 12th, March 2025 GMT
ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে বলে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান উপদেষ্টা। এ সময় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়।
গত রোববার আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের মামলায় তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর বিচার শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে। এ ছাড়া উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন তবে ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়াই চিকিৎসা সনদের ভিত্তিতে এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষীর ভিত্তিতে মামলার বিচারকাজ চালাতে পারবেন। এমন বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আজ উপদেষ্টা জানান, অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, গত পরশু ও গতকাল (মঙ্গলবার) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে পরামর্শ সভা করা হয়েছে। একটি খসড়া আইন (অধ্যাদেশ) করা হয়েছে। সেটি আজ কিছু কিছু অংশীজনের কাছে পাঠানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই আইন কঠোর করার চেষ্টা করা হবে, যাতে ধর্ষণ মামলার বিচার শুধু দ্রুতই নয়, বিচারও যাতে নিশ্চিত ও যথাযথ হয়, এগুলো তাদের (ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ) বলা হয়েছে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ের পরবর্তী সময়ে দেশে মেয়েদের আক্রমণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে এবং বিভিন্ন ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও তাঁদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে।
ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, তিনিও মনে করেন তাঁদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক। তাঁরা বলেন, মাগুরায় যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে যেন বিচার নিশ্চিত করা হয়। তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, মাগুরার ঘটনায় আসামি যারা আছে পুলিশ এরই মধ্যে তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই বিচারকাজ কোনোরকম কালবিলম্ব না করে দ্রুত ও ন্যায়বিচার যাতে করা হয়, সে জন্য বিশেষ নজরদারি থাকবে। এটি তাদের বলা হয়েছে।
‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ অন্যান্য দাবির বিষয়েও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ পাঁচ দফা দাবি
এ সময় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মঞ্চের একজন প্রতিনিধি। তিনি বলেন, মাগুরায় শিশু ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং এক মাসের মধ্যে যেন বিচারিক কাজটি শেষ হয় ও তাদের আশা দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হবে। দ্বিতীয়ত, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, যেখানে ধর্ষণের মামলার বিচার হবে। তৃতীয়ত, সারা দেশে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, সে বিষয়ে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রকে জবাবদিহি করতে হবে, বিশেষ করে আইন, স্বরাষ্ট্র এবং নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার কথা বলেছেন তাঁরা। চতুর্থত, সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ কার্যকর করতে হবে। পঞ্চম দাবি হলো, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যে আইনগুলো আছে অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোর আইনি পরিভাষায় অস্পষ্টতা আছে, যার ফাঁকফোকর ধরে ধর্ষকেরা বেরিয়ে যায়। এগুলো যেন স্পষ্ট করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।