চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দীর্ঘ ৯ বছর পর আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম সমাবর্তন। এত বছর পর কাঙ্ক্ষিত সমাবর্তনের খবরে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।

তবে ইতোমধ্যে মূল সনদ গ্রহণকারীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) অনুষ্ঠিতব্য সমাবর্তন নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যারা মূল সনদ উত্তোলন করেছেন, তারা পঞ্চম সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। ২০১১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীগণ এ সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন চলবে।

আরো পড়ুন:

ছাত্রদল কর্মীদের বিরুদ্ধে চবি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ

ফ্যাসিবাদের দোসররা নতুন দলে অর্থায়ন করছে কিনা জানতে চান নাসির

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ ৯ বছর চবিতে কোনো সমাবর্তন হয়নি। সমাবর্তনের আশায় তারা ৯ বছর সনদ না তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে দেবেন, এটি অবান্তর। এত বছরে বিভিন্ন প্রয়োজনে তারা মূল সনদ উত্তোলন করেছেন। সনদের জন্য তাদের এ আয়োজন থেকে বঞ্ছিত করা চরম অন্যায়। প্রয়োজনে এটি অন্য কোনভাবে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এছাড়া সর্বশেষ চতুর্থ সমাবর্তনে মূল সনদপ্রাপ্তদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবারো তাই করা হোক। শর্ত দিয়ে সমাবর্তন করা হলে বাদ পড়বে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। 

তবে শিক্ষার্থীদের এসব সমালোচনা আমলে না নিয়ে প্রশাসন বলছে, সমাবর্তন মানে সনদ নেওয়া। সনদ উত্তোলনের পর সমাবর্তনে অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই। তবে ইতোমধ্যে যারা মূল সনদের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনো গ্রহণ করেননি- এমন সনদে স্বাক্ষর না হলে তা বাতিল করা সাপেক্ষে তারা সমাবর্তনের সুযোগ পাবেন।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী লোকমান হাকিম বলেন, “চাকরির জন্য অধিকাংশ সময় মূল সনদ প্রয়োজন হয়। তাই আমরা তা উত্তোলন করে ফেলেছি। নিয়মিত সমাবর্তন হচ্ছে না- এটা আমাদের দায় নয়। অথচ এর কারণে প্রশাসন আমাদের এত বড় ইভেন্ট থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। চতুর্থ সমাবর্তনে যারা মূল সনদ উত্তোলন করেছিল, তাদেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আমরা চাই এবারো তা-ই করা হোক।”

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক সাবেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, “ভাবতেছি চাকরিটা ছেড়ে দেব। তাও যদি সার্টিফিকেট ফেরত নিয়ে সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় আরকি! আর শেষ মাসের স্যালারি দিয়ে রেজিস্ট্রেশনটা করবো! নিয়মগুলো দ্রুত সংশোধনের জোর দাবি জানাচ্ছি।”

আরেক সাবেক শিক্ষার্থী জারিন তানজুম সোহানি ফেসবুকে লিখেছেন, “ঢাবিসহ দেশের অন্য পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ২-৩ বছর পরপর সমাবর্তন দিলে প্রশাসনের এ শর্তের যৌক্তিকতা থাকত। যেহেতু চবির সমাবর্তন হওয়া অনিশ্চিত একটা বিষয়, তাই চবিয়ানরা বাধ্য হয়েই চাকরিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে নিজেদের মূল সনদ তুলে নেয়। সেজন্য এক্সেপশনাল কেস হিসেবে এবং নিজেদের ব্যর্থতার দায় থেকেই মূল সনদ উত্তোলনকারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশনের যেসব শর্তাবলি দেওয়া হয়েছে, তা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি প্রশাসন সবাইকে সমাবর্তনে সুযোগ দিতে যায়, তাহলে বেসামাল একটা অবস্থা হবে। সমাবর্তন মানেই সনদ নেওয়া। সনদ গ্রহণের পর আসলে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিকল্প কিছু করা যায় কিনা তা দেখা যেতে পারে।”

মূল সনদের জন্য আবেদন করেছে কিন্তু এখনো গ্রহণ করেনি- এমন শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে সুযোগ পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদি এখন পর্যন্ত সনদে সিগনেচার না হয়, তাহলে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তাদের দ্রুত নির্দিষ্ট দপ্তরে গিয়ে সনদ উইথড্র (প্রত্যাহার) করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “সমাবর্তন নিয়মিত কেন হয়নি- সেটা আগের প্রশাসনই ভালো বলতে পারবেন। এখন থেকে আমরা প্রতি বছর বা দুই বছর পরপর সমাবর্তন করব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো.  কামাল উদ্দিন বলেন, “সমাবর্তনটা মূলত শিক্ষার্থীদের সনদপত্র দেওয়ার জন্যই করা হয়। আমরা ২০১১-২০২৩ পর্যন্ত পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সমাবর্তন আয়োজন করছি। দীর্ঘদিন সমাবর্তন না হওয়ায় প্রচুর শিক্ষার্থী পাস করে বের হয়ে গেছেন। এই শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটা এত বেশি যে, সবার জন্য সমাবর্তন আয়োজন করা খুবই কঠিন বিষয়। এত এত শিক্ষার্থীর জন্য ব্যবস্থাপনা করাটা রীতিমত অসম্ভব। তাই আমরা চেয়েছি সংখ্যাটা কমাতে।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করে আমারো খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এরপরেও আমি এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে পুনরায় আলাপ করব। কোনো কিছু করা যায় কিনা তার চেষ্টা করব।”

চবিতে এ পর্যন্ত মোট চারবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বপ্রথম সমাবর্তন হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর দ্বিতীয়টি ১৯৯৯ সাল, তৃতীয়টি ২০০৮ সাল এবং সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য অন ষ ঠ ত বছর পর সনদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ

এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।

ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।

‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।

ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

ডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।

প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।

পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।

নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউব

ইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।

ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।

ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।

২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ