জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বলিগ্রাম পশ্চিমপাড়া বড়পুকুর থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধারের পর এটি হত্যাকাণ্ড ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে দেন ছেলে শাহীন মণ্ডল (৩৮)। ঘটনার পর থেকে নজরদারিতে রেখে শনিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শনিবার রাতে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার শাহীন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। 

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত বৃদ্ধ রজ্জব আলী (৬০) ভ্যানচালক ও পুকুর পাহারাদার (নাইটগার্ড) ছিলেন। গত ২১ ডিসেম্বর রাতে তিনি বাড়িতে খাবার খেয়ে পুকুর পাহারা দিতে যান। ২২ ডিসেম্বর কৃষকরা মাঠে কাজ করতে যাওয়ার পথে বৃদ্ধের লাশ পুকুরের পানিতে ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। সে সময় পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় লোকজনের ধারণা ছিল, শীতের রাতে বৃদ্ধ পানিতে পড়ে যাওয়ার মৃত্যু হয়েছে। সে সময় কালাই থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়। বৃদ্ধের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেন পরিবারের সদস্যরা।

এ ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ হলে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করলে আদালত লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। রজ্জব আলীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, এটি হত্যাকাণ্ড বলে জানতে পারে তারা। এ ঘটনায় নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী বাদী হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কালাই থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, হত্যার পেছনে বৃদ্ধের বড় ছেলে শাহীনের হাত রয়েছে।

পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, বাবার প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই ছেলে শাহীন পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেন। এ ঘটনা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে লাশ পুকুরে ফেলে দেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ছেলে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ