নরসিংদীতে নিখোঁজের ৩ দিন পর শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
Published: 16th, March 2025 GMT
নরসিংদীতে নিখোঁজের তিন দিন পর বাড়ির পাশ থেকে সাদ্দাম হোসেন নামে তিন বছর বয়সী এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নের বিলপাড় এলাকার এক পরিত্যক্ত জায়গা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয় শিশু সাদ্দাম। সে বিলপাড় এলাকার প্রবাসী আমজাদ হোসেনের ছেলে। ধারণা করা হচ্ছে, শনিবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা অর্ধগলিত লাশটি সেখানে ফেলে গেছে। লাশের শরীরে ফুলে পচন ধরে গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির বাবার সঙ্গে তার মায়ের বিচ্ছেদের পর আরেক প্রবাসীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে ওই নারী তাঁর বাবার বাড়িতে থাকেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি নিখোঁজ হলে নরসিংদী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আজ সকালে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি জায়গায় দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে শিশুটির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল হান্নান বলেন, ‘এইটুকু শিশুর তো কোনো শত্রু থাকতে পারে না। কেউ হয়তো নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শিশুটিকে বলির পাঠা বানিয়েছে। সব বিষয় আমলে নিয়েই তদন্ত শুরু হয়েছে। সাধারণ ডায়েরিটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
শুক্রবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, “একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘর পানিতে পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।”
আরো পড়ুন:
হঠাৎ বন্যা, পানির নিচে চলনবিলের ১১৩ হেক্টর জমির ধান
দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে
বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, “গতকাল সকাল থেকেই নদীতে পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।”
বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, “প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।”
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, “উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। আজ দুপুরে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এ মূহূর্তে বিপৎসীমার ৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।”
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।”
২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
ঢাকা/সাহাব/মাসুদ