সংসারের খরচ মেটাতে মাঝে মধ্যে অন্যের জমিতে কাজ করতেন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের তিলডাঙ্গা গ্রামের রাধিকা শীল। কিন্তু বছরখানেক আগে তিনি নিজের জমিতে চাষ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বেসরকারি একটি সংস্থা বীজ, সার ও অর্থ সহায়তা দিল। সরকারের কৃষি বিভাগ দিল প্রশিক্ষণ। এখন নিজের পুকুরে মাছ ও ধান চাষ করেন রাধিকা।

রাধিকা শীল জানান, আগে বছরের বড় একটি সময় ঋণ করে চলা লাগত। এখন বাড়ির সামনের জমিতে মাছ, ধান ও সবজি চাষ করেন। সমন্বিত খামার থেকে বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়। আগের ঋণ পরিশোধের পর এখন কিছু টাকাও জমেছে। নতুন করে এ বছর কুমড়ো ও সবজি চাষের জন্য এক বিঘা জমি ইজারা নিয়েছেন।

শুধু রাধিকা শীলই নন, বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় কৃষিশ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন উপকূলের নারীরা। তারা এখন নিজেরাই নিজেদের জমিতে ফসল ফলান। কেউবা মাছ চাষ করেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় উপকূলের বেশির ভাগ গ্রাম লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এখানে ফসল ফলানো চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই ফসল নষ্ট হয়। এসব কারণে দাকোপ, কয়রাসহ উপকূলের উপজেলাগুলোতে কৃষিকাজে অনাগ্রহ ছিল মানুষের।

সম্প্রতি লবণসহিষ্ণু ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং অনেক বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদের পুরোনো ঝোঁক ফিরে এসেছে। তারা ফসলের পানির জন্য পুকুর তৈরি করছেন। সেই পানিতে মাছ, ধান ও সবজি সমন্বিত চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে অনেকের।

দাকোপ ও কয়রা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোর মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। বাকিরা কৃষিকাজ ও মাছ চাষ করেন। দাকোপের বিভিন্ন গ্রামে গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি মাঠেও শ্রমিকের কাজ করেন নারীরা।

সহজাত এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড। দুই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করেছে তারা। 

দাকোপের তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার চন্দ্রা বিশ্বাস তাদেরই একজন। তিনি বলেন, আগে অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি সবজি চাষ করেছেন। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সবকিছুই পাল্টে গেছে। এখন মাছও চাষ করেন তিনি। আইলে টমেটো, লাউ, ঢ্যাঁড়শসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। দুটি থেকেই আয় হয়।

একই ধরনের বক্তব্য দিলেন একই গ্রামের মমতা রায়। পশু পালনের পাশাপাশি সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী তিনি। তাঁর ক্ষেতে কাজ করেন গ্রামের অনেক পুরুষ।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় ধরে লবণপানিতে চিংড়ি চাষের কারণে এখানে মানুষের মধ্যে চাষের প্রবণতা কম ছিল। এখন দ্রুত সেটা বাড়ছে। নারীরাও এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন।

উপকূলের নারীদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে যারা কাজ করছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড তাদের মধ্যে অন্যতম। কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা কোআইসার অর্থায়নে পাঁচ বছর ধরে এ কাজ করছেন তারা।

সংস্থার ক্লাইমেট চেঞ্জ রেসিলেন্স প্রোগ্রাম ম্যানেজার মশিউর রহমান বলেন, উপকূলের অতিদরিদ্র ৪ হাজার পরিবারকে বাছাই করে তাদের বীজ থেকে চারা উৎপাদন, কম পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন, হাস-মুরগি, ছাগল পালন ও ঘেরের আইলে সবজি চাষসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাই নারী। শুরুতে সামান্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হলেও নারীরাই তাদের প্রচেষ্টায় ঋণ নিয়ে বড় খামার তৈরি করেছেন। নিজেদের প্রচেষ্টায় উপকূলের নারীরা এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপক ল উপক ল র ন র চ ষ কর ন সহয গ ত ক জ কর উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গোদাগাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারীসহ ৬ জন আহত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। ধানের পালায় অগ্নিসংযোগ এবং খেতের পেয়ারা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পানিপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১১ জুন) প্রথমে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর দিন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ছয়জন এখন গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন, চর আষাড়িয়াদহ পানিপার গ্রামের আল্লাম হোসেন, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবু, মেয়ে ফাতেমা বেগম, নাতি জিহাদ (১৪), ইয়াকুব আলী এবং তাদের প্রতিবেশী বকুল ওরফে কান্দু। তাদের মধ্যে আল্লামের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ফাতেমার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত

আড়াইহাজারে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫

আহতরা জানান, দিয়াড় মহব্বতপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের কাছ থেকে আল্লাম হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালের ১৮ মে  শন্য দশমিক ৪৯৫০ একর ও তার আরেক ছেলে মুরশালীন ইসলাম ২০১৮ সালের ৯ মে শূন্য দশমিক ১১০০ একর জমি কেনেন। এর দলিলও করা হয়। জামিলুর রহমান আরএস রেকর্ডমূলে জমি বিক্রি করেন। পরে বিডিএস রেকর্ডে দলিলের কথা গোপন করে এসব জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে তারা জমিগুলো আবার দখলের চেষ্টা করছিলেন।

তারা আরো জানান, জমি কেনার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে পেয়ারা বাগান করা হয়। গত ১১ জুন সকালে জামিলুর রহমান ও তার ভাই আদিল হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ছেলেরা গিয়ে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় আল্লাম হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছে নালিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন জামিলুর রহমান, তার ভাই আদিল হোসেন এবং তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল্লাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়িটিতে ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ধানের পালায়। দুই দিনের হামলায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। 

আহত আল্লাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধানের পালার আগুন নেভাতে গেলে হামলাকারীরা তার নাতি জিহাদকে ধাক্কা দিয়ে আগুনের ভেতর ফেলে দেয়। এতে তার পা পুড়ে যায়। তার আরেক নাতি ইয়াকুবকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে গেলে মেয়ে ফাতেমার গলায় হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়। ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে প্রতিবেশী বকুলকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।

ভুক্তভোগী আল্লাম আরো জানান, হামলাকারীরা তাদের আহত অবস্থায় ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা এখনো তাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। জমির দাবি করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেয়া হলে এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত জামিলুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। আহতরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ