আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় ৯ মার্চ ব্যবসায়ী দিলীপ দাসকে কুপিয়ে হত্যা ও স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া লুণ্ঠিত ১৩ ভরি স্বর্ণালংকার, স্বর্ণ বিক্রির ৭৬ হাজার টাকা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার আশুলিয়া থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো.

আনিসুজ্জামান। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার পিটুয়া বন্দেরবাড়ি গ্রামের রিপন মিয়া, পাবনা জেলার সুজানগর থানার চর ভবানীপুর শেখপাড়া গ্রামের আরিফ প্রামাণিক, একই জেলার আতাইকুলা থানার সরাডাঙ্গী (সরদারপাড়া) গ্রামের শাহ আলম, আরমান শেখ, রাজশাহী জেলার কর্ণহার গ্রামের রাধানগর শল্লাপাড়া মোড় এলাকার ইব্রাহিম বাবু ও কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার বৃষ্টিপুর গ্রামের মাসুদ রানা। 

পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এদের মধ্যে কেউ দিনের বেলায় অটোরিকশা চালায়, কেউ ফলের ব্যবসা করে। এসব পেশার ফাঁকে তারা বিভিন্ন এলাকায় রেকি করে রাতে ডাকাতি করত। এদের মধ্যে ৫ ডাকাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যা ও স্বর্ণ লুট করে। একজন ডাকাতির মালপত্র নিজের জিম্মায় রাখে। গ্রেপ্তার ইমরান, তার দুই ভাই শাহ আলম ও আরমান, রিপন, আরিফ, আকাশ, তালিম ও মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ ঘটনার দিন প্রাইভেট কার ভাড়া করে নয়ারহাট এলাকায় স্বর্ণের দোকান লুট করতে যায়। এর মধ্যে ঘটনার সময় ইমরান ও আকাশ গাড়ির ভেতরে ছিল। আরমান ও শাহ আলম ঘটনাস্থলের পাশে পাহারা দেয় এবং তালিম ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। রিপন ও আরিফ চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রী সরস্বতী দাসের সামনেই ব্যবসায়ী দিলীপকে খুন করে। মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে ভাড়া করা গাড়িতেই ৮ ডাকাত পালিয়ে যায়। 

পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রিপনকে সাভারের যাদুরচর এলাকা থেকে এবং মাসুদ রানা, শাহ আলম ও আরমানকে আশুলিয়ার বারইপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যে আরিফকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির স্বর্ণ ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজশাহীর কর্ণহাট এলাকা থেকে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে লুট করা ৫ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে আরমানের ফলের দোকান থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত দুটি চাপাতি। এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল টপ ট গ র প ত র কর শ হ আলম স বর ণ আরম ন

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ