শিশুকে ডেকে নিয়ে ব্লেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, কিশোর গ্রেপ্তার
Published: 19th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহ নগরে ১১ বছর বয়সী এক শিশুকে ব্লেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করার অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে গত সোমবার বিকেলে নগরের আকুয়া দারুস সালাম মসজিদ এলাকায় শিশুটিকে আটকে রেখে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে ওই কিশোর। আহত শিশুটির নাম রাব্বী (১১)। সে নগরের আকুয়া চৌরঙ্গীর মোড় এলাকায় নানা–নানির সঙ্গে থাকত এবং সানকিপাড়া বাজারে একটি ব্রয়লার মুরগির দোকানে শ্রমিকের কাজ করত।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, সানকিপাড়া বাজারে শ্রমিকের কাজ করে অভিযুক্ত ওই কিশোর। প্রায় দুই মাস আগে তার সঙ্গে রাব্বীর কথা–কাটাকাটি হয়। ওই সময় থেকে শিশুটিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় কিশোরটি। সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুরগির দোকান থেকে রাব্বীকে ডেকে নিয়ে যায় ওই কিশোর। পরে আকুয়া দারুস সালাম মসজিদ এলাকায় নিয়ে সে শিশুটির চোখ বাঁধে। ব্লেড দিয়ে তার বুক, পিঠ, মাথা ও ঠোঁট কেটে দেয় সে। একপর্যায়ে শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে একটি বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নেয়। ওই বাড়ির সদস্যরা মুঠোফোনে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাব্বীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে শিশুটির নানার বাসা আকুয়া চৌরঙ্গীর মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নানি আনোয়ারা খাতুন ও খালা লাকি আক্তার আহাজারি করে কাঁদছেন। আনোয়ারা বলেন, ‘দোহান থাইকা ডাইক্যা নিয়া আমার নাতিনরে এমনে শইলডা জুইরা কাটতে পারল ওরা? আমার নাতির কোনো অন্যায় আছিল না। হেরে যারা এমন করছে, আল্লায় যেন এর বিচার করে।’
শিশুটির খালা লাকি আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। এলাকার মানুষের সহায়তায় ভাগনের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আল্লায় অভাগারে বাঁচাইয়া থুইয়া যাক।’
এ ঘটনায় সোমবার রাতেই কিশোরকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন রাব্বীর নানা নায়েব আলী। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার পরপর কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান বলেন, গ্রেপ্তার শিশুটি একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তবে আরও কেউ সম্পৃক্ত আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’