আরসা সদস্যদের বাসা ভাড়া করে দিতেন ময়মনসিংহের মনির, এমনটাই ধারণা পুলিশের
Published: 20th, March 2025 GMT
রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধানসহ যে ১০ জনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত একজন বাংলাদেশি। তাঁর নাম মনিরুজ্জামান। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে। পুলিশ বলছে, মনিরের মাধ্যমেই আরসা সদস্যরা দেশে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মনির আরসার সঙ্গে জড়িত শুনে তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসী বিস্মিত।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা গতকাল মঙ্গলবার জানায় র্যাব।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের আতিকুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান (২৪)। আতিকুল ইসলাম একই উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে একটি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় মনির। কওমি মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ সালে হেফজ শেষ করে মাওলানা হতে তিনি নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। করোনাকাল থেকে তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। গাজীপুরের টঙ্গীতেও মাদ্রাসায় চাকরি করতেন, এমনটিই জানেন তাঁর স্বজনেরা।
আরও পড়ুনমাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে বাসা ভাড়া নেন আরসার প্রধান আতাউল্লাহ, হতবাক প্রতিবেশীরা১৪ ঘণ্টা আগেস্বজন ও এলাকাবাসী মনিরের গ্রেপ্তারের খবর সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারেন। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ছয়জনের একজন মনিরুজ্জামান। সেখানে ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন মনির, এমনটি উল্লেখ আছে গতকাল রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় হওয়া মামলায়। ওই ভবনের ফ্ল্যাট থেকেই আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী গ্রেপ্তার হন।
আজ বুধবার বেলা ২টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জের চরআলগী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মনিরের গ্রেপ্তারের খবরে তাঁর বাড়িতে আসছেন আশপাশের মানুষজন। ময়মনসিংহ নগরের নতুন বাজার মোড়ের গার্ডেন সিটি ভবন থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আরসা সদস্যরা যে বাসাটিতে বসবাস করছিলেন, সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন মনির। তাঁর একটি জাতীয় পরিচয়পত্র সেখানে দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ছবি দেখালে মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই মুত্তাকীন হাসান তাঁর ভাইকে শনাক্ত করেন।
আরও পড়ুনময়মনসিংহের ব্যস্ততম এলাকায় যেভাবে থাকতেন আরসা সদস্যরা২১ ঘণ্টা আগেমুত্তাকীন হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মনির তাঁর আপন বড় ভাই। তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। রোজা শুরুর এক দিন আগে রোজার বাজার নিয়ে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। এক রাত থেকে চলে যান। টঙ্গীতে মাদ্রাসায় চাকরি করতেন, ময়মনসিংহেও থাকতেন বলে শুনেছেন। তবে ময়মনসিংহে কী কাজ করতেন, তা তিনি জানেন না। তাঁর ভাষ্য, বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অসুখ ধরা পড়ায় মনিরের বিদেশে যাওয়া হয়নি। তাঁর ভাই আরসার সঙ্গে কীভাবে জড়ালেন, তাঁরা তা বলতে পারবেন না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খুব কম কথা হতো। যখন টাকা প্রয়োজন পড়ত, ফোন করলে টাকা পাঠাতেন ভাই।
চরআলগী গ্রামে পাকা সড়কের পাশেই একটি টিনশেডের বাড়িতে বসবাস মনিরের পরিবারের। মনিরের মা চম্পা আক্তার বলেন, খবরে দেখেছেন ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভাবের সংসার, টেনেটুনে দিন চলে। ছেলে হয়তো সঙ্গীদের ফাঁদে পড়ে এমন কাজে জড়িয়েছেন। তিনি দাবি করেন, মনির সরল প্রকৃতির। না বুঝে হয়তো এ কাজ করেছেন।
আরও পড়ুনসশস্ত্র সংগঠন গড়ে এক বছরেই আলোচনায় আসেন আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ১৬ ঘণ্টা আগেমনিরের বাবাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি কোনাপাড়ায় মাদ্রাসায় ছিলেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে আরসার সদস্যদের সঙ্গে কীভাবে জড়ালেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
মনির বাড়িতে এলেও কারও সঙ্গে মিশতেন না বলে দাবি করলেন প্রতিবেশী শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলাফেরায় বোঝা যেত, মনির খুব সরল। মনিরের গ্রেপ্তারের খবর তাঁদের কাছে আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে। তবে মনির যদি দেশবিরোধী কাজ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর বিচার হতে হবে।
আরও পড়ুনরোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার প্রধানসহ ১০ জন নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার১৮ মার্চ ২০২৫ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুর রহমান বলেন, মনিরুজ্জামান এলাকায় বেশি আসতেন না। তাঁর সম্পর্কে এলাকার মানুষও তেমন কিছু জানেন না। তদন্ত কর্মকর্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে তাঁর সম্পর্কে পুলিশ অনুসন্ধান করবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন র জ জ ম ন স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ল ইসল ম মন র র আরস র করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
টঙ্গীতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, সাউন্ড নিক্ষেপ
গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এ ঘটনায় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি নিক্ষেপ করেছে।
বুধবার সকাল ৯টার থেকে গাজীপুরা এলাকার সৃজন্স ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ শুরু করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারখানার কয়েক'শ শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে শিল্প পুলিশ-২ এবং টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ কয়েক দফা চেষ্টা করেও শ্রমিকদের সরাতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং গরম পানি ছিটিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে।
বিক্ষোভরত শ্রমিক শিল্পি আক্তার বলেন, ঈদের আগে আমাদের অর্ধেক বেতন আর অর্ধেক বোনাস দিয়ে কারখানা ছুটি দেয়। বলা হয়েছিল, ঈদের পরেই বাকী টাকা পরিশোধ হবে। কিন্তু এখনও কিছুই পাইনি। বাড়িওয়ালা তো আশ্বাসে ভাড়া নেয় না, দোকানও বাকির টাকা চায়। সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, আমরা কোথায় যাবো?
আরেক শ্রমিক রহমত বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমাদের ওপর গরম পানি ছুড়ে দেওয়া হলো। এভাবে কি শ্রমিকের ন্যায্য দাবি দমন করা যায়?
শ্রমিকদের দাবি, কারখানার মালিক পক্ষ গত ২০ এপ্রিল কিছু বোনাস পরিশোধ করলেও ২৮ এপ্রিলের মধ্যে পুরো বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ–২ এর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।