রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধানসহ যে ১০ জনকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত একজন বাংলাদেশি। তাঁর নাম মনিরুজ্জামান। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে। পুলিশ বলছে, মনিরের মাধ্যমেই আরসা সদস্যরা দেশে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মনির আরসার সঙ্গে জড়িত শুনে তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসী বিস্মিত।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা গতকাল মঙ্গলবার জানায় র‍্যাব।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের আতিকুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান (২৪)। আতিকুল ইসলাম একই উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে একটি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় মনির। কওমি মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ সালে হেফজ শেষ করে মাওলানা হতে তিনি নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। করোনাকাল থেকে তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। গাজীপুরের টঙ্গীতেও মাদ্রাসায় চাকরি করতেন, এমনটিই জানেন তাঁর স্বজনেরা।

আরও পড়ুনমাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে বাসা ভাড়া নেন আরসার প্রধান আতাউল্লাহ, হতবাক প্রতিবেশীরা১৪ ঘণ্টা আগে

স্বজন ও এলাকাবাসী মনিরের গ্রেপ্তারের খবর সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারেন। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ছয়জনের একজন মনিরুজ্জামান। সেখানে ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন মনির, এমনটি উল্লেখ আছে গতকাল রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় হওয়া মামলায়। ওই ভবনের ফ্ল্যাট থেকেই আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী গ্রেপ্তার হন।

আজ বুধবার বেলা ২টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জের চরআলগী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মনিরের গ্রেপ্তারের খবরে তাঁর বাড়িতে আসছেন আশপাশের মানুষজন। ময়মনসিংহ নগরের নতুন বাজার মোড়ের গার্ডেন সিটি ভবন থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আরসা সদস্যরা যে বাসাটিতে বসবাস করছিলেন, সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন মনির। তাঁর একটি জাতীয় পরিচয়পত্র সেখানে দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ছবি দেখালে মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই মুত্তাকীন হাসান তাঁর ভাইকে শনাক্ত করেন।

আরও পড়ুনময়মনসিংহের ব্যস্ততম এলাকায় যেভাবে থাকতেন আরসা সদস্যরা২১ ঘণ্টা আগে

মুত্তাকীন হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মনির তাঁর আপন বড় ভাই। তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। রোজা শুরুর এক দিন আগে রোজার বাজার নিয়ে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। এক রাত থেকে চলে যান। টঙ্গীতে মাদ্রাসায় চাকরি করতেন, ময়মনসিংহেও থাকতেন বলে শুনেছেন। তবে ময়মনসিংহে কী কাজ করতেন, তা তিনি জানেন না। তাঁর ভাষ্য, বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অসুখ ধরা পড়ায় মনিরের বিদেশে যাওয়া হয়নি। তাঁর ভাই আরসার সঙ্গে কীভাবে জড়ালেন, তাঁরা তা বলতে পারবেন না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খুব কম কথা হতো। যখন টাকা প্রয়োজন পড়ত, ফোন করলে টাকা পাঠাতেন ভাই।

চরআলগী গ্রামে পাকা সড়কের পাশেই একটি টিনশেডের বাড়িতে বসবাস মনিরের পরিবারের। মনিরের মা চম্পা আক্তার বলেন, খবরে দেখেছেন ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভাবের সংসার, টেনেটুনে দিন চলে। ছেলে হয়তো সঙ্গীদের ফাঁদে পড়ে এমন কাজে জড়িয়েছেন। তিনি দাবি করেন, মনির সরল প্রকৃতির। না বুঝে হয়তো এ কাজ করেছেন।

আরও পড়ুনসশস্ত্র সংগঠন গড়ে এক বছরেই আলোচনায় আসেন আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ১৬ ঘণ্টা আগে

মনিরের বাবাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি কোনাপাড়ায় মাদ্রাসায় ছিলেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে আরসার সদস্যদের সঙ্গে কীভাবে জড়ালেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

মনির বাড়িতে এলেও কারও সঙ্গে মিশতেন না বলে দাবি করলেন প্রতিবেশী শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলাফেরায় বোঝা যেত, মনির খুব সরল। মনিরের গ্রেপ্তারের খবর তাঁদের কাছে আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে। তবে মনির যদি দেশবিরোধী কাজ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর বিচার হতে হবে।

আরও পড়ুনরোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার প্রধানসহ ১০ জন নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার১৮ মার্চ ২০২৫

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ময়মনসিংহ নগরের বাসাটি মনিরুজ্জামান ভাড়া নিয়েছিলেন। তবে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বাসা থেকে। তাঁরা ধারণা করছেন, আরসা সদস্যরা মনিরের মাধ্যমেই দেশে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুর রহমান বলেন, মনিরুজ্জামান এলাকায় বেশি আসতেন না। তাঁর সম্পর্কে এলাকার মানুষও তেমন কিছু জানেন না। তদন্ত কর্মকর্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে তাঁর সম্পর্কে পুলিশ অনুসন্ধান করবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন র জ জ ম ন স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ল ইসল ম মন র র আরস র করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির চিঠি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সিদ্ধিরগঞ্জ এবং সোনারগাঁ থানা এবং সোনারগাঁ পৌরসভা বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সোনারগাঁ থানা এবং পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দকে চিঠি দিয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন ও পৌরসভা বিএনপি সভাপতি শাজাহান এবং সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মেম্বারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, "নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা পুনর্গঠন করার কারণে সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং সোনারগাঁ পৌর বিএনপির উপর নতুনের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে।

তাই আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সোনারগাঁ থানা এবং সোনারগাঁও বিএনপির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার যাতে আগামী নির্বাচনে আমাদের বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী করতে পারি। 

আপনাদের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রস্তাব করছি। আমাদের এই প্রস্তাবটি আপনাদের থানা পৌর কমিটির সভায় উপস্থাপন করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।"

উল্লেখ থাকে যে, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। এই দুই থানার ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন এই আসনের জনপ্রতিনিধি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির হাইকমান্ড সারা দেশের সকল সংসদীয় আসনের দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের নির্ধারিত দুই থানার দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরী বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোন বিকল্প নাই বলে মনে করেন সকলে। বিশেষ করে দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যে বিভেদ বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করে দলীয় প্রতীকের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে আসন্ন নির্বাচনে এর করা মাশুল গুনতে হবে বলে আশংকা রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের।

এরই আলোকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের নির্ধারিত সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নেওয়া জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলে।

সেই সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এই আহবানে সাড়া দিয়ে সোনারগাঁ বিএনপির নেতাকর্মীরা সকল বিভেদ বিভক্তি ভুলে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ তাদের।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • “শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, ইন্ধন থাকতে পারে তৃতীয় পক্ষের”
  • শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০ (ভিডিও)
  • শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০
  • ফতুল্লায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
  • সোনারগাঁয়ের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির চিঠি
  • গাজীপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মহাসড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
  • ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ 
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • ময়মনসিংহে সিলিন্ডার লিকেজে হোটেলে অগ্নিকাণ্ড 
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড় ধসের শঙ্কা