দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। নানা দাবি ও উস্কানিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ যেন থামছেই না। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি, জনভোগান্তির পাশাপাশি সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এই শিল্পের।

শিল্প অধ্যুষিত জেলা গাজীপুরে নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে, ১১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানা। এর বাহিরে ছোট ও মাঝারি বহু কারখানা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় পোশাক শিল্পে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, তার প্রায় অধিকাংশ বকেয়া বেতন, বোনাস না পাওয়া, বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি ও চাকরীচ্যুত কেন্দ্রিক।

শিল্প পুলিশ ও কলকারখানা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজীপুরে অর্ধশত শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া, চলতি বছর বন্ধ হয়েছে আরো ২০টি কারখানা।

বন্ধ হওয়া এসব কারখানার শ্রমিকদের অনেকে কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে মাঝেমধ্যে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই মহাসড়ক ব্যবহারকারী চালক ও যাত্রীরা।

কারখানার মালিক ও কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে কিছু ন্যায্য ও অন্যায্য দাবি থাকে। ন্যায্য দাবিগুলো হলো- ছুটির টাকা, হাজিরা বোনাস, বকেয়া বেতন ও পদোন্নতি। অযৌক্তিক দাবিগুলো হলো- হুট-হাট বেতন বাড়ানো, দ্রুত স্থায়ীকরণ, অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ শ্রমিকদের সম অধিকার দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি, উৎপাদন বন্ধ রাখা ইত্যাদি। এছাড়া, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন, শ্রমিক নেতাদের সঠিক দায়িত্ব পালন না করা, গুজবে কান দেওয়া মতো ঘটনাও কাজ করে।

তারা জানান, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে যদি মাঝারি আকারের একটি কারখানা এক দিন বন্ধ থাকে, তাহলে ৭০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়। বড় কারখানা ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এটি পণ্য অর্ডারের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। শ্রমিক অসন্তোষের নতুন একটি রূপ নিয়েছে, যেটি আগে ছিল না বলে জানান তারা।

বলেন, বর্তমানে শ্রমিক অসন্তোষ হলেই কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকরা। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও আক্রমণ চালান তারা।

কারখানার মালিক ও কর্মকর্তারা দাবি করেন, শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতার যে দাবি করেন, এটি অনেক সময় গ্যাসের সমস্যার কারণে ব্যাঘাত ঘটে। গাজীপুরে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় গ্যাসের সমস্যা রয়েছে। গ্যাসের সমস্যা থাকলে উৎপাদন কমে যায়। আর উৎপাদন কম হলে বেতন-ভাতা পরিশোধে মালিকদের হিমশিম খেতে হয়।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ২ হাজার ১০৭টি পোশাক শিল্প কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে, ১ হাজার ৯৪০টি কারখানা এখন পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে। তবে, ১৬৭টি কারখানা এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে, ৪০টি কারখানা বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশের সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ

বিজিএমইএ থেকে নির্দেশনা ছিল, ২০ মার্চের মধ্যে সকল পোশাক শিল্প কারখানায় ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, বোনাস ও মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধের। কিন্তু, অনেক কারখানায় এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়নি। আর কোনা কারখানায় এখনো মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি বলে জানা গেছে।

ঈদের আগে বেতন-বোনাস না পেলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। এজন্য গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ থেকে শ্রমিকদের সচেতনতা ও সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৫৫০ জন শিল্প পুলিশের সদস্য কাজ করছেন। তারা শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন।

শ্রমিক অসন্তোষ মনিটরিং হেল্পলাইন চালু

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও শ্রম পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করতে শ্রমিক হেল্পলাইন নম্বর ১৬৩৫৭ চালু করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এ হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে।

অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনের সংগঠক আরমান হোসাইন বলেন, ‘‘২৪ এর অভ্যুত্থানের পর শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে, গাজীপুর অন্যতম। জেলায় লাগাতার আন্দোলন চলে আসছে। পোশাক খাতে অসন্তোষের প্রধান কারণ বকেয়া বেতন ও শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি। কিন্তু, বারবার এই বিষয়গুলো এড়িয়ে শ্রমিকদের ওপরে দায় দেওয়া হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কেন অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সুযোগ নেই? যার মাধ্যমে শ্রমিক কারখানার অভ্যন্তরেই সমাধানের সিদ্ধান্ত নিতে পারত। অনেক যায়গায় মালিক পক্ষ আন্দোলনে থাকা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিক ছাঁটাই করে কালো তালিকাভুক্ত রাখায় শ্রমিকদের ভেতর অসন্তোষ চলমান রয়েছে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও জীবন-জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করলেই শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে অসন্তোষ থামা সম্ভব।’’

মাহমুদ জেনিমস কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো.

আবু তালেব বলেন, ‘‘বহিরাগত শ্রমিকদের উস্কানিতে বিভিন্ন সময় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। আমাদের কারখানায় শ্রমিকদের বেতন নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তবে, পাশের অন্য কারখানায় অসন্তোষের কারণে ও বহিরাগত শ্রমিকদের উস্কানিতে আমাদের কারখানা অনেকবার বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় কারখানা এক দিন বন্ধ থাকলে কোটি টাকার মতো লোকসান গুণতে হয়।’’

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজীপুরে অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। আর ঈদ এলে বোনাস, ছুটিসহ অন্যান্য কারণে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। আশা করছি, মালিক পক্ষ আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঈদ বোনাস দিয়ে দিবেন।’’

তিনি বলেন, ‘‘শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতামূলক লিফটের বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শিল্প পুলিশের সাড়ে ৫ শতাধিক সদস্য ও বিভিন্ন জোনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’’

ঢাকা/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত পর শ ধ ক জ কর ন বন ধ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ