সিদ্ধিরগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা জিতু অধরা
Published: 21st, March 2025 GMT
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম জিতু এখনও অধরা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের মেয়ের জামাই পরিচয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি এখন ডিস, ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ ভাবে মাল্টিপারপাস ব্যবসা করে যাচ্ছে। জহিরুল ইসলাম জিতু নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৪নং ওয়ার্ডের উত্তর আজিবপুর আঁটি গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার কর্মী হয়ে রাজনীতি করে দখলে নিয়েছেন ডিস, ইন্টারনেটসহ সুদের ব্যবসা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের রাজনীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
শামীম ওসমানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকজন সাপ্লাই দেয়া ছিল তার কাজ। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার এর প্রধান আসামি নুর হোসেনের গানম্যান ছিল এ জিতু। ওই আমলে মাদক ও ইয়াবার ডিলার ছিল তিনি।
পরে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বডিগার্ড হিসেবে কাজ করার সুবাদে এ অঞ্চলের সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সেই যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম জিতু এখনো অধরা।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসা যুবলীগ ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির এক বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে বর্তমানে বীরদর্পে চালিয়েছেন ব্যবসা। এলাকাজুড়ে স্থানীয়দের মাঝে বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। তৃণমূল বিএনপি নেতাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামীলীগের আমলে এমন কোন অপরাধ নেই যে তিনি করেন নাই।
স্থানীয়দেও অভিযোগ, এখনো অনেককে মোবাইলে ও প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। আটিগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বাসিন্দারা ভয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হননি। এক অজানা আতঙ্কে নাম জহিরুল ইসলাম জিতু।
এ বিষয়ে জহিরুল ইসলাম জিতুকে একাধিক বার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহীনুর আলম জানান, যদি তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকে শীঘ্রই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য স দ ধ রগঞ জ য বল গ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ য বল গ ব যবস ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।