ক্ষুব্দ হয়ে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলেন যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি
Published: 21st, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে যুবদলের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী ও সামর্থ্যহীনদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এসে ক্ষুব্দ হয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর ক্ষুব্দ হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন তিনি। পরে তাকে ম্যানেজ করে অনুষ্ঠানস্থলে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন আয়োজকরা।
সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনুষ্ঠানকে ঘিরে একদিন আগে থেকে পুরো বিদ্যালয় এলাকা দলীয় ব্যানার ফেস্টুন ও ছবি দিয়ে ভরে ফেলেন যুবদলের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানকে ঘিরে শৃঙ্খলা রক্ষায় নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিশেষ পোশাকসহ নিয়োজিত করেন।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতির গাড়ির পাশে থাকা একাধিক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতি মূলত চেয়েছিলেন যেহেতু তারেক রহমানের ঈদ উপহার পৌছে দেয়া হয়ে তাই প্রান্তিক স্থানে অনুষ্ঠানটি হোক বা কোন খোলা স্থানে অনুষ্ঠানটির আয়োজন হোক। তবে তিনি এখানে এসে দেখেন একটি বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে স্কুল ঢেকে ফেলা হয়েছে।
স্কুলে যুবদলের কিছু নেতাকর্মী বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক পোশাকের পাশাপাশি ওয়াকিটকি ব্যবহার করছেন। সবকিছু মিলিয়ে স্কুলের ভেতরে তার গাড়ি প্রবেশের সময় তিনি স্কুলে অনুষ্ঠানে না গিয়ে ক্ষুব্দ হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যান।
জানা যায়, পুরো স্কুলের সকল ব্যানার ফেস্টুনে শুধুমাত্র জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির নাম ছিল। স্কুলে আয়োজনের মূল পরিকল্পনাও ছিল রনির তাই তার উপরও ক্ষুব্দ হন কেন্দ্রীয় সভাপতি।
পরে তিনি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে চলে গেলে সেখানে জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদেকুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক খাইরুল ইসলাম সজীব ও সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি তার কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাকে অনুরোধ করেন অনুষ্ঠানস্থলে ফিরে যেতে।
ক্ষুব্ধ যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে। সেখান থেকে প্রায় দুই ঘন্টা পরে পুনরায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। সেখানে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তার সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে তিনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম অনুষ্ঠানটি প্রত্যন্ত এলাকায় করতে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে তারেক রহমানের উপহার সামগ্রী বিতরণ করতে কিন্তু এখানে এসে দেখি শহরে অনুষ্ঠানটি করা হয়েছে। আমার জন্য অনেকক্ষু আপনাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে এজন্য আমি দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে উপস্থিত একাধিক যুবদল নেতা জানান, যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির উপর প্রচন্ড ক্ষোভ ঝাড়েন এবং এই উপহার সামগ্রী বিতরণকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মশিউর রনির চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চান।
এ সময় মশিউর রহমান রনি নানাভাবে বুঝিয়ে যুবদল সভাপতিরে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং এজন্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওত হোসেন খানকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসেন। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত যুবদল সভাপতিকে অনেকক্ষু বুঝিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে নিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন একাধিক যুবদল নেতা।
এদিকে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না রাগ করে চলে যাওয়া এবং ফিরে আসার এই নাটকীয় ঘটনার কারণে উপহার নিতে আসা গরিব অসহায় মানুষগুলোকে প্রায় দুই ঘন্টা অতিরিক্ত সেখানে বসে থাকতে হয়। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা এ বিষয়ে যুবদল সভাপতি মুন্নার কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে দ্রুত অনুষ্ঠানিস্থল ত্যাগ করেন। তখন স্থানীয় সাধারণ মানুষকে বলতে শোনা যায় "তারা ক্ষমতায় আসার আগেই এগারোটার ট্রেন একটায় ছাড়ে, ক্ষমতায় আসলে না জানি কখন ছাড়বে!
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: য বদল য বদল ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ক ষ ব দ হয় ন ত কর ম অন ষ ঠ ন য বদল র উপহ র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।