টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে ফের সড়ক অবরোধ
Published: 23rd, March 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে বি এইচ আই এস অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা ফের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
রোববার সকাল ৭টা থেকে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশ অবরোধ করেন শ্রমিকরা। পরে যৌথবাহিনীর অনুরোধে সকাল ৯টায় মহাসড়ক ত্যাগ করে কারখানার সামনে অবস্থান করছেন।
শ্রমিকরা বলেন, কারখানাটিতে প্রায় ১,৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। ১১ মার্চ ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের জন্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। চার ঘণ্টা পর তারা সড়ক ত্যাগ করেন। ২০ মার্চ শ্রমিকদের কিছু বেতন পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। পরে অন্য শ্রমিকরা রোববার সকালে বেতনের জন্য কারখানার সামনে আসেন।
এসময় কারখানার সামনে বন্ধের নোটিশ দেখে শ্রমিকরা সকাল ৭টায় হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সকাল ৯টায় যৌথবাহিনী সমস্যা সমাধানের কথা বলে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে কারখানার সামনে সরিয়ে নেয়। বর্তমানে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান করছে।
শ্রমিক স্বর্ণালী বেগম বলেন, কিছুদিন পরই ঈদ। এখন বেতন-ভাতা আটকে রেখে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা মানে আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া। আমরা দিশেহারা। কীভাবে বাসা ভাড়া দেব, দোকানের বাকি শোধ করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।
শ্রমিক শারমিন আক্তার বলেন, ১১ মার্চ বেতনের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করার পর ২০ মার্চ কিছু শ্রমিককে বেতন দেয়। আমাদের সমস্যার সমাধানের জন্য তারা কোনো চেষ্টা করেনি।
এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ টঙ্গী জোনের পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছিল। মহাসড়ক থেকে সরে তারা এখন কারখানার সামনে অবস্থান করছেন। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ ন র জন য অবর ধ ক
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ