সকাল থেকে বিকেএসপিতে তামিমের সঙ্গে যা ঘটেছে
Published: 24th, March 2025 GMT
সাভারের বিকেএসপিতে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার তামিম ইকবাল। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর তার হার্টে একটি ব্লক ধরা পড়ে এবং রিং (স্টেন্ট) পরানো হয়। বর্তমানে তিনি একটি হাসপাতালের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (CCU) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
মাঠেই হার্ট অ্যাটাক, হাসপাতালে তামিম ইকবাল
জানা গেছে, তামিম দুইবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। ঠিক কীভাবে দিনের শুরু থেকে তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটল, তা জানানো হয়েছে তামিম ইকবালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এডমিনের বরাতে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে। নিচে তা তুলে ধরা হলো—
হার্টে ব্লক তামিমের, পরানো হলো রিং
‘সকালে টসের পর হালকা বুকে ব্যথা অনুভব করেন তামিম। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে দলের ফিজিও ও ট্রেইনারকে জানান। প্রথমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মনে করে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সতর্কতামূলকভাবে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিকেএসপিতে ফিরে আসেন।’
তামিমের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা
‘পরে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোহামেডান ক্লাবের ম্যানেজার শিপন ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হেলিকপ্টার ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হয়, যেন দ্রুত উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। তবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে আবারও তামিমকে নেওয়া হয় নিকটবর্তী কেপিজে হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে।’
তামিমের জন্য প্রার্থনায় শাহরুখ খানের নাইট রাইডার্স
‘সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার হার্টে একটি ব্লক শনাক্ত হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে রিং পরানো হয়। এখন তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (CCU) রয়েছেন।’
তামিমের জন্য দোয়া চাইলেন তাসকিন-মিরাজরা
তামিম ইকবালের দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশজুড়ে দোয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে তার জন্য প্রার্থনায় শামিল হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ম ম ইকব ল ত ম ম ইকব ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।
কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।
জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।
২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।
চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।