ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ১৩টি ইহুদি বসতি এলাকাকে আশপাশের এলাকাগুলো থেকে আলাদা ঘোষণা করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। গতকাল রোববার ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এ কথা বলেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে স্মোট্রিচ এ পদক্ষেপ সম্পর্কে লিখেছেন, বসতি এলাকাগুলো শেষ পর্যন্ত স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। পশ্চিম তীরজুড়ে কয়েক হাজার আবাসনের অনুমোদনের পর এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

স্মোট্রিচ এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা বসতিগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছি। লুকিয়ে না থেকে এবং ক্ষমা না চেয়ে আমরা পতাকা ওড়াই, নির্মাণ করি এবং বসতি স্থাপন করি। জুডিয়া ও সামারিয়ায় প্রকৃত সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ জুডিয়া ও সামারিয়া বলতে গোটা পশ্চিম তীরকে বুঝিয়ে থাকে ইসরায়েল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলা হয়েছিল। সে হামলার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কায় পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের বিরোধিতা আরও জোরালো করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে এবং সন্দেহভাজনদের নিশানা করছে।

আন্তর্জাতিক বৈধতা ও সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে বসতিগুলোকে আলাদা করা এবং সেগুলোকে স্বাধীন বসতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারা এটাকে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ঔপনিবেশিক দখলদারি সুসংহত করার একটি মরিয়া প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের দখল নেয় ইসরায়েল। এ এলাকাগুলোতে ২৭ লাখ ফিলিস্তিনির পাশাপাশি প্রায় ৭ লাখ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর বসবাস।

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ যুদ্ধে দখলকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে মনে করে। তবে বাইবেল ও ইতিহাসের বরাত দিয়ে ইসরায়েল এ মতের বিরোধিতা করে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের পক্ষের রাজনীতিবিদেরা উৎসাহিত হয়েছেন।

কট্টর ডানপন্থী দল রিলিজিয়াস জায়নিজমের প্রধান স্মোট্রিচ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারি জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। স্মোট্রিচ বছরের পর বছর ধরে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদক ষ প ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ