পাইকপাড়ায় বহাল তবিয়তে স্বৈরাচারের দোসর শেখ বোরহানউদ্দিন ও তার ছেলে
Published: 24th, March 2025 GMT
অপারেশন ডেভিল হান্ট চলাকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে, আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
তবে পালিয়ে না গিয়ে এখনো এলাকায় বীরদর্পে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে নাসিক ১৭নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়া নামাপাড়া এলাকার চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ বোরহানউদ্দিন ও তার ছেলে ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রোকনউদ্দিন আরমান।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের একান্ত অনুগামী সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল করীম বাবু ওরফে ডিশ বাবুর সহযোগী ছিলেন এই শেখ বোরহানউদ্দিন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শামীম ওসমান সহ ডিশ বাবু নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও এখনো এলাকায় বাহল তবিয়তে প্রকাশ্যে রয়েছেন শেখ বোরহানউদ্দিন ও তার ছেলে।
জানাগেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নামাপাড়া খানকা শরীফের মোতওয়াল্লী আওয়ামী লীগের আরেক নেতা মেজাহউদ্দিন খোকনকে সড়িয়ে নিজে মোতওয়াল্লীর পদটি দখল করে নেন।
অভিযোগ রয়েছে সেসময় খানকা শরীফে ওরশের নাম করে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের থেকে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন তিনি। সরকার পতনের পর বর্তমানে সেই খানকা শরীফের মোতওয়াল্লীর পদটিকে পূঁজি করে এলাকায় অবস্থান করছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, খানকা শরীফের নিজস্ব জমিতে অবৈধভাবে ২টি ব্যাটারী চালিত অবৈধ অটোরিক্সার গ্যারেজ, ২টি ব্যাকারী, ১টি ওয়ার্কশপ এবং ৫টি দোকানঘর তুলে তা ভাড়া দিয়ে সেই টাকা নিজের পকেটস্থ করছেন তিনি।
এছাড়া, নামাপাড়া সমাজ উন্নয়ন সংসদের রেজিষ্ট্রিকৃত নিজস্ব ক্লাবকে দোকানঘর হিসেবে ভাড়া দিয়ে সেই ভাড়া আত্মসাৎ করছেন তিনি। তার এহেন কর্মকান্ডে কেউ বাধা দিতে চাইলে তার ছেলে এবং ভাই ভাতিজাদের দিয়ে নির্যাতন করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরো জানাগেছে, শেখ বোরহানউদ্দিনের ছেলে ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রোকনউদ্দিন আরমান ছিলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামী অয়ন ওসমান ও আহমেদ কাওসারের একান্ত আস্থাভাজন।
শুধু তাই নয়, ছাত্র আন্দোলনের সময় অবৈধ অস্ত্র কিনতে মোটা অংকের টাকার যোগান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তারা বিরুদ্ধে। পতিত সরকারের আমলে এলাকায় অয়ন ওসমান ও আহমেদ কাওসারের শেল্টারে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলো রোকনউদ্দিন আরমান।
তবে, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ এক নেতার কিছু অনুগামীদের সাথে সখ্যতা গড়ে এলাকায় প্রকাশে চলাফেরা করছে স্বৈরাচারের দোসর শেখ বোরহানউদ্দিন ও তার ছেলে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ এল ক য় আওয় ম সরক র ওসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।