গণহত্যার দুর্লভ নির্দশন থেকে যাচ্ছে আড়ালেই
Published: 24th, March 2025 GMT
মহান মুক্তিযুদ্ধে চালানো গণহত্যার দুর্লভ সব সংগ্রহ নিয়ে খুলনা নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে গড়ে ওঠে দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর। ভেতরে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার অসংখ্য নিদর্শন, নথি, বইপত্র থাকলেও তা দেখার সুযোগ পাচ্ছে না মানুষ। ৮ মাস ধরে বন্ধ জাদুঘরের প্রধান ফটক। স্বল্প পরিসরে আর্কাইভ অংশ চালু থাকলেও পরিচালন বরাদ্দ না থাকায় সেই কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
জাদুঘর সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২০ জুলাই সংস্কারের কারণে জাদুঘর বন্ধ করা হয়। আন্দোলনের পর সেটি আর চালু হয়নি। এর মধ্যে ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে চিকিৎসা না দেওয়ায় জাদুঘরের সামনের হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ
ছাত্ররা। ওই সময় জাদুঘরের প্রধান ফটকও ভাঙচুর করা হয়। এতে অরক্ষিত হয়ে পড়ে জাদুঘর।
এর পর ফটক মেরামতের জন্য কয়েকবার গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। জাদুঘর ও আর্কাইভ পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পাওয়ার কথা ছিল, তবে সেই টাকাও ছাড় হয়নি। এতে আর্থিক সংকটে নিজেরাও ফটক মেরামত করতে পারছে না। তহবিল না থাকায় জাদুঘর ও আর্কাইভের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ছাঁটাই করা হয়েছে ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
১৯৭১ সালের ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় গণহত্যার তথ্য নতুন প্রজন্মসহ বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ২০১৪ সালে খুলনায় গড়ে তোলা হয় ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’। অধ্যাপক ড.
শুরুতে নগরীর শেরেবাংলা রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে আর্কাইভ ও জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫ সালে জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে নগরীর ২৬ সাউথ সেন্ট্রাল রোডে জমিসহ একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয় সরকার। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে সেখানে প্রায় ৩২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ তলা নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে। খুলনার দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয়। গত মে মাসে ভবনটি চালু হয়।
এখন জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, শহীদদের চিঠিসহ ১৯২ ধরনের নিদর্শন রয়েছে। আছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সাড়ে তিন শতাধিক ছবি। আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে ১০ হাজারের বেশি ছবি, দুই হাজারের মতো ভিডিও ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য নথি।
জাদুঘরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবেশমুখেই দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের নৃশংস গণহত্যার সাক্ষী প্লাটিনাম জুট মিলের বয়লার। এই বয়লারে ফেলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে। জাদুঘরের প্রবেশপথটি টিন ও বাঁশ দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ। ফটকের পাশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সংবলিত টেরাকোটা অযত্নে পড়ে আছে।
জাদুঘরের ডেপুটি কিউরেটর মো. রোকনুজ্জামান বাবুল বলেন, প্রধান ফটকটি মেরামত না করে জাদুঘর চালু করা যাচ্ছে না। এ জন্য কয়েকবার গণপূর্ত বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের এক সদস্য জানান, ফটক মেরামতের জন্য ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। জাদুঘরের নিজস্ব তহবিলে এত টাকা নেই। জাদুঘর পরিচালনায় যে অনুদান পাওয়ার কথা, সেটিও পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ বিল, স্টাফ বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা লাগে। বর্তমানে তহবিল সংকটে কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তাও বড় বিষয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়া জাদুঘরটি চালু করা ঝুঁকিপূর্ণ।
গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ওই ভবন মেরামতের জন্য আমাদের তহবিলে বরাদ্দ নেই। মন্ত্রণালয় থেকে যদি তহবিল দেয়, তাহলে আমরা মেরামত করে দিতে পারব।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের খুলনা মহানগর কমান্ডার মনিরুজ্জামান মনি বলেন, জাদুঘরটি চালুর জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরতে দ্রুত জাদুঘরটি খুলে দেওয়া প্রয়োজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণহত য জ দ ঘর র প গণহত য র য় জ দ ঘর ম র মত র জন য তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)