প্রতিবার ফোনে কথা বলে মনে হয় এটাই হয়তো শেষ কথা: ইউক্রেনের পাইলটের স্ত্রী
Published: 25th, March 2025 GMT
স্বামীর পরবর্তী কল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করাটাই এখন মারিয়ার অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাই যে শেষ কথা হবে না, এটা নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় তাঁদের নেই।
ইউক্রেনের ৩১ বছর বয়সী ইভান যুদ্ধের শুরু থেকেই আকাশপথে দেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরুর পর থেকে সোভিয়েত যুগের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান নিয়ে ২০০–এর বেশি বিপজ্জনক মিশনে অংশ নিয়েছেন তিনি।
যুদ্ধের তিন বছরে ইউক্রেনের এই স্কোয়াড্রন কমান্ডার অনেক কমরেডকে (সহযোদ্ধাকে) হারিয়েছেন। তাঁদের অনেকে ছিলেন ইভানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বর্তমানে তিনি পশ্চিম ইউক্রেনের একটি বিমানঘাঁটিতে কাজ করছেন। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা হলো না।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে, যা অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। গতকাল সোমবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।
মারিয়া বলেন, ‘যদি কোনো যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে আমরা নিরাপদ বোধ করব।’
যুদ্ধ নিয়ে ইউক্রেনের মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ইদানীং দেশটির বিপুলসংখ্যক মানুষ যুদ্ধজনিত অবসাদ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে নির্মম এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য তাঁরা আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁরা পশ্চিমাদের কাছ থেকে শক্তিশালী সুরক্ষার নিশ্চয়তা চাইছেন, যাতে করে রাশিয়া আবার হামলা চালাতে না পারে।
তবে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের ভূখণ্ড হারাতে হবে কি না, তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন মারিয়া। যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের চারটি অঞ্চল আংশিকভাবে দখলে নিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে ২০১৪ সাল থেকে দখল করে রেখেছে ক্রিমিয়া। ভূখণ্ড হারানোর শঙ্কা নিয়ে ২৯ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কেউ আমাদের হারানো ভূখণ্ড উদ্ধার করে দেবে না। সেগুলো রাশিয়ার দখলদারত্বেই থাকবে।’
এই নারীর জিজ্ঞাসা, ‘ইউক্রেন যদি তাঁদের জন্য লড়তে না পারে এবং ছাড় দিতে বাধ্য হয়, তাহলে আমাদের এত মানুষ, এত বীর কেন জীবন উৎসর্গ করল?’
মারিয়া ও ইভানের মধ্যে যখন প্রথম দেখা হয়েছিল, তখন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল।
পশ্চিম ইউক্রেনের স্থানীয় শিশুদের একটি ক্লাবের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন মারিয়া। ওই ক্লাবে পড়ত ইভানের এক সহযোদ্ধার মেয়ে। তিনিই মারিয়ার সঙ্গে ইভানের পরিচয় করিয়ে দেন। মারিয়াকে ‘চমৎকার শিক্ষক’ বলে ইভানের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ওই সহযোদ্ধা।
এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে দেখা করবেন কি না, তা নিয়ে শুরুর দিকে চাপে ছিলেন ইভান। শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হন। রাজি হয়ে খুশিই হয়েছিলেন ইভান। এরপর দেরি না করে তাঁরা নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ শুরু করেন।
দেখাসাক্ষাতের শুরুর দিকে একদিন ইভান নিজের কাজের ঝুঁকি নিয়ে মারিয়াকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু মারিয়ার কাছে এটা কোনো সমস্যা মনে হয়নি। ইভান ছিলেন সাহসী, যত্নবান এবং আগলে রাখার মানসিকতাসম্পন্ন। এর ফলে ধীরে ধীরে প্রেমে পড়ে যান মারিয়া।
এমন অবস্থায় চাকরির খাতিরে ইভানকে দীর্ঘদিনের জন্য ঘর থেকে দূরে চলে যেতে হয়। এক বছর তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। এতে করে তাঁদের সম্পর্ক অনেকটা শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছিল।
কিন্তু একদিন ইভান বড় একটি ফুলে তোড়া নিয়ে ফিরে আসেন এবং মারিয়াকে প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি আর তাঁর সময় নষ্ট করতে চান না। এক বছরের মধ্যে তাঁরা বিয়ে করেন এবং শিগগিরই প্রথম সন্তানের আশায় দিন গুনতে শুরু করেন।
রাশিয়া পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরুর পরই মারিয়া বুঝতে পারলেন, নিজের কাজের কঠিন বাস্তবতা বলতে ইভান আসলে কী বুঝিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের আমলে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কী অগ্রগতি হলো২৪ মার্চ ২০২৫রাশিয়া যখন প্রথম হামলা চালায়, তখন তাঁদের কন্যা ইয়ারোস্লাভা কেবল তিন মাসের শিশু। তাই ইভান তার শুরুর মাইলফলকগুলো দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যেমন ইয়ারোস্লাভার হাঁটতে শেখা, প্রথম দাঁত ওঠা দেখা এবং প্রথম অসুস্থতায় পাশে থাকা ইত্যাদি।
মারিয়া বলেন, ‘ইভান যখন বাড়ি থেকে অনেক দূরের ঘাঁটিতে থাকে, তখন আমি তাকে আমাদের মেয়ের হাজার হাজার ছবি পাঠাই। অন্তত ভার্চ্যুয়ালি সে আমাদের সঙ্গে আছে, এটা ভাবতে যাতে তার সুবিধা হয়।’
একবার ইভানের মিশনের স্থান ছিল কাছাকাছি স্থানে। তখন কন্যাকে বাচ্চাদের চাকাওয়ালা একটি গাড়িতে (প্র্যাম) করে তাড়াহুড়ো করে তল্লাশিচৌকিতে গিয়েছিলেন মারিয়া। সেখানে তাঁরা পাঁচ মিনিট কথা বলতে পেরেছিলেন।
তখন ইভানের জন্য ঘরের তৈরি খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন মারিয়া। তাঁরা কথা বলেছিলেন। একসঙ্গে থাকার প্রতিটি মিনিট তাঁদের অপেক্ষার প্রতিটি মাসের মতো মনে হয়েছিল।
কথা বলতে শেখার আগেই ইয়ারোস্লাভা তাঁর ছোট্ট হাত দিয়ে ইঙ্গিত দেখাতে শিখে যায়, তার বাবা আকাশে উড়োজাহাজ চালায়।
মারিয়া বলেন, ‘আমাদের মেয়ে জানে যে তার বাবা একজন পাইলট।’ ইয়ারোস্লাভার জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে মারিয়া বলেন, ‘যখন তার জন্মদিন থাকে এবং ভিডিও কলে তার বাবা জন্মদিনের কেক খায়—তখন আমরা তার (ইয়ারোস্লাভা) কাছে খুলে বলি, রুশদের থেকে তিনি ইউক্রেনকে রক্ষা করছেন।’
মেয়ে ইয়ারোস্লাভাকে নিয়ে মারিয়া ও ইভান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র হয় ছ ল র জন য আম দ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে দুই ট্রেনের সময় বদলে যাচ্ছে
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলা সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে নতুন করে নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নতুন সময়সূচি আগামী ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস (৮২১ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি এখন সকাল সোয়া ৬টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেন চলাচল করবে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে।
আর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী প্রবাল এক্সপ্রেস (৮২২ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি কক্সবাজার স্টেশন ছাড়বে সকাল ১০টায়। এখন এ ট্রেন ছাড়ে ১০টা ২০ মিনিটে। গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেসের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের উপপ্রধান পরিচালন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান।
রেলওয়ের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকীকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, যাত্রীদের চাহিদা ও সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রামমুখী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে এখন দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করে আরও দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন।
কক্সবাজার রেললাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর। প্রথমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর বিরতিহীন ট্রেন দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে চলাচল শুরু করে পর্যটক এক্সপ্রেস। এটাও দেওয়া হয় ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন না দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
গত বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ট্রেন। এরপর ইঞ্জিন ও কোচের সংকটের কথা বলে গত বছরের ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে রেলওয়ে। গত বছরের ১২ জুন থেকে আবার চালু হয় ট্রেন। আর নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হয় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।
সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রী ওঠানামার জন্য ষোলশহর, জানালী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা ও রামু স্টেশনে থামবে।
আর প্রবাল এক্সপ্রেস যাত্রাপথে থামবে ষোলশহর, গোমদণ্ডী, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু স্টেশনে।