মসজিদুল আকসা বা আল কুদস ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত। এটি বায়তুল মুকাদ্দাস নামে পরিচিত। কুদস অর্থ পবিত্র। বায়তুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত। প্রিয় নবীজি (সা.) মিরাজের রাতে প্রথমে মসজিদুল হারাম (কাবা শরিফ) থেকে মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস সফর করেন। (সুরা ইসরা, আয়াত ১)

হজরত মুহাম্মদ (সা.

) মিরাজ গমনের সময় মসজিদুল আকসায় সব নবী-রাসুলের ইমামতি করে নামাজ আদায় করেন। এতে তিনি ইমামুল আম্বিয়া (সব নবীর ইমাম) ও সাইয়্যিদুল মুরসালিন (সব রাসুলের নেতা) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ফিলিস্তিনে বহু নবী-রাসুলের স্মৃতি রয়েছে, এর আশপাশে অনেক নবী-রাসুলের সমাধি রয়েছে। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণের স্থান, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির উৎসভূমি ও ইসলাম প্রচারের লালনক্ষেত্র। এই পবিত্র ভূমির ভালোবাসা প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত রয়েছে।

হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর তাঁর দ্বিতীয় পুত্র হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)-এর সন্তান হজরত সুলাইমান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জেরুজালেম নগর উদ্বোধন করেন।

মানবজাতির প্রথম কিবলা ছিল কাবা শরিফ, তবে মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) নবুয়ত প্রকাশের সময় বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকেই নামাজ পড়তেন

মানবজাতির প্রথম কিবলা ছিল কাবা শরিফ, তবে মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) নবুয়ত প্রকাশের সময় বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকেই নামাজ পড়তেন। মদিনায় হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই কিবলা পরিবর্তিত হয়ে পুনরায় কাবা শরিফ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। যার স্মারক হিসেবে মদিনায় মসজিদে কিবলাতাইন (দুই কিবলার মসজিদ) এখনো বিদ্যমান। এ ঘটনাকে তাহবিল কিবলা বা কিবলা পরিবর্তন বলা হয়। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৪২-১৫১)।

এ কারণেই বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কিবলা হিসেবে পরিচিত। হাদিস শরিফে এসেছে, কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজের সওয়াব এক লাখ গুণ, মসজিদে নববিতে ৫০ হাজার গুণ এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে ২৫ হাজার গুণ। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ইবাদতের উদ্দেশ্যে তিনটি মসজিদে সফর করা যায়—মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসা। (মুসলিম)

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে ৬৪৮ সালে বায়তুল মুকাদ্দাস, জেরুজালেমসহ পুরো ফিলিস্তিন মুসলমানদের অধিকারে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে। ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) পুনরায় জেরুজালেম মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর পর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই উদ্দেশ্যে ইহুদিরা তৎকালীন তুর্কি সালতানাতের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের অনুমতি চায়, কিন্তু তিনি তাদের এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন দখল করে এবং ১৯২০ সালে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ইহুদিরা সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণা অনুযায়ী জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়, যা আজও চলছে।

১৯৬৭ সালে ইসরায়েল জোরপূর্বক মসজিদুল আকসা দখল করে নেয়। এরপর মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে। দখলদার ইসরায়েল একের পর এক মুসলিম এলাকা দখল করে বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে এবং হত্যা, গুম, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইসরায়েলের ঘৃণ্য পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের প্রতিরোধ আন্দোলনের কারণে সম্পূর্ণ সফল হতে পারেনি। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।

১৯৭৯ সাল থেকে আল আকসা মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে বিশ্ব মুসলিম প্রতিবছর রমজানের শেষ শুক্রবার ‘আল কুদস দিবস’ পালন করে আসছে। এখন এটি ফিলিস্তিন মুক্তির এবং বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, আর বিভক্ত হয়ো না। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৩)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম সলম ন ইসর য় ল প রথম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার