উৎপাদিত আলুর ৮৮ শতাংশ থাকবে সংরক্ষণের বাইরে
Published: 28th, March 2025 GMT
দিনাজপুর সদরের ঘুঘুডাঙ্গা এলাকার কৃষক মোসাদ্দেক আলী। সড়কে দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে আলু সংরক্ষণ করতে হয়েছে তাঁর। এরপরও যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলেন, তা রাখতে পারেননি। একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, চার দিন সিরিয়াল দিয়ে হিমাগারে আলু রাখতে পেরেছেন। মাঠ থেকে তুলে নিয়ে আসেন। ম্যানেজার বলছেন, আর জায়গা নেই।
সব কৃষক আলু রাখতে আসছেন। তাদের অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে।
জেলায় এবার আলুর ভালো ফলন হলেও বাজারে দাম কম। লোকসান কমাতে হিমাগারে সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকছেন মোসাদ্দেক ও রফিকুলের মতো কৃষক। দীর্ঘ লাইন দিয়ে সংরক্ষণ করতে তাদের দিনরাত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় এবার যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হবে, তার মাত্র ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ সংরক্ষণ করা যাবে। বাকি ৮৮ শতাংশের বেশি বাইরে থাকবে।
দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কে প্রায় ১৫ দিন ধরে ভ্যান, ট্রাক্টরসহ আলু বোঝাই বিভিন্ন যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। হিমাগারে রাখার জন্য কৃষক জমি থেকেই এসব নিয়ে এসেছেন। জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয়ের তথ্যমতে, দিনাজপুরে হিমাগার রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে ১৪টি পুরোনো এবং নতুন করে স্থাপিত হয়েছে দুটি। পুরোনোগুলোর ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২৭ হাজার ৪০০ টন। নতুন দুটিতে ২০ থেকে ২২ হাজার টন সংরক্ষণ করা যাবে।
১৬টি হিমাগারে ১ লাখ ৫০ হাজার টন রাখা যাবে। এবার জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৩২ টন। যে পরিমাণ আবাদ হয়েছে, মাত্র ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ ধারণক্ষমতা রয়েছে। সে হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টন সংরক্ষণ করা যাবে না। ফলে যে পরিমাণ সংরক্ষণের পরিকল্পনা ছিল স্থানীয় কৃষকের, তার অর্ধেকও রাখতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
বিরল উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার কৃষক গোলাম মোস্তফা আগেভাগে হিমাগারে আলু রাখার জন্য স্লিপ নেন। অনেক কষ্টে তিনজন মিলে ৮০ বস্তার স্লিপ পান। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাখার উদ্দেশ্য হলো, এখন তো আলুর দাম নেই। এগুলো বীজ হিসেবে আমরা জমিতে বপন করব। কৃষকের জন্য তো সংরক্ষণের ব্যবস্থা বা জায়গা থাকা দরকার। আমি যে পরিমাণ জমিতে আবাদ করি, তাতে করে আমার ৫০ বস্তা রাখা দরকার। রাখতে পারলাম ৩০ বস্তা।’
হিমাগারে কৃষকের ফসল সংরক্ষণে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সদর উপজেলার বোলতৈড় এলাকার কৃষক সেলিম রেজা। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী হিমাগারে আলু রাখতে পারলেও কৃষক পারছেন না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, আর কৃষক জমিতে বপন করবেন। তাহলে কার রাখতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত? হিমাগারে তো অনেক জায়গা নেই। এটি কীভাবে সমাধান করা যায়, যারা দায়িত্বে আছেন তারা অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিপদে পড়তে হয়েছে হিমাগারসংশ্লিষ্টদেরও। যানজট নিরসনে শ্রমিকদের অধিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আবার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আলু এনেছেন কৃষক। সবাই একসঙ্গে নিয়ে আসায় জটিলতা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জাহানারা কোল্ড স্টোরেজের কর্মচারী আনিসুর রহমানের ভাষ্য, এবার আবাদ বেশি হওয়ায় কৃষকের চাপ বেশি ছিল। সবাই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে চান।
এবারে কৃষক অনেক বেশি আলুর আবাদ করেছেন বলে জানান অফিস সহায়ক মোয়াজ্জেম ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল ঠিকই ছিল। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকের চাপ ছিল। সবার মধ্যে চিন্তা ছিল যে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে কিনা। আমাদের যে ধারণক্ষমতা, তা নিয়েছি। এরপরও অনেকে সংরক্ষণের জন্য এসেছিলেন।’
পূর্ণভবা কোল্ড স্টোরেজের কর্মচারী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, প্রচুর আবাদ এবং ফলন ভালো হওয়ায় দ্রুত জায়গা পূরণ হয়েছে। এখন ভেতরে ঠিকভাবে রাখা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির স্টোর কিপার শ্যামল চন্দ্র দাসের ভাষ্য, কৃষক হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না। কারণ এত জায়গা নেই।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, জেলায় গত অর্থবছর পর্যন্ত ১৪টি হিমাগার থাকলেও এবার নতুন দুটি স্থাপন করা হয়েছে। ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার টন। নতুন দুটি হিমাগার স্থাপিত হলেও তা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। এ জন্য এবারের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৫০ হাজার টন হতে পারে। এ বছর অতিরিক্ত ১০ হাজার হেক্টরে আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর জেলায় ৪৮ থেকে ৫০ হাজার হেক্টরে আবাদ হয়। এতে ১০ থেকে ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন করেন কৃষক।
এবার আলুর বেশি আবাদ হওয়ায় সব
হিমাগারে চাপ রয়েছে বলে জানান, জাহানারা কোল্ড স্টোরেজের হিসাবরক্ষক নুর উল্লাহ। তিনি বলেন, আগে কখনও এমন চাপ হতো না। দাম কমে যাওয়ায় শুরু থেকে কৃষকের চাপ রয়েছে। গত বছর দাম বেশি থাকায় এবার সবাই আবাদ করেছেন। অনেকের বাড়িতে এখনও আলু আছে, অনেকে জমি থেকে তুলছেন। পূর্ণভবা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মো.
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত এবং পর্যাপ্ত হিমাগার স্থাপনের বিকল্প নেই বলে জানান জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হাসান। তিনি বলেন, যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়, তার স্বল্প পরিমাণ সংরক্ষণ করা যায়। এ জন্য কৃষক ঠিক দাম পাচ্ছেন না। আরও সংরক্ষণাগার স্থাপন করতে হবে। সেই সঙ্গে সনাতন পদ্ধতিতেও সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল ধ রণক ষমত হ জ র টন র জন য ব যবস ব পণন উৎপ দ হওয় য়
এছাড়াও পড়ুন:
গুগলের সার্কেল টু সার্চে আসছে নতুন দুই সুবিধা
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোনে দ্রুত নির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে দিতে গত বছর ‘সার্কেল টু সার্চ’-সুবিধা চালু করে গুগল। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফোনে ভিডিও দেখার সময় বিভিন্ন দৃশ্যে থাকা পণ্যের ছবি নির্বাচন করে সে বিষয়ে সরাসরি গুগলে সার্চের ফলাফল জানা যায়। অর্থাৎ ভিডিওতে থাকা যেকোনো ব্যক্তির চশমা সার্কেল করলে নিচে চশমাটি-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য গুগল সার্চের মাধ্যমে দেখার সুযোগ মিলে থাকে। ব্যবহারকারীদের দ্রুত বিভিন্ন তথ্য জানার সুযোগ দিতে সার্কেল টু সার্চে নতুন দুই সুবিধা যুক্ত করতে যাচ্ছে গুগল।
জানা গেছে, গুগল অ্যাপের সর্বশেষ বেটা সংস্করণ বিশ্লেষণ করে সার্কেল টু সার্চে নতুন দুই সুবিধা যুক্তের বিষয়টি শনাক্ত করা হয়েছে। গানের তালিকা সংরক্ষণ এবং অনুবাদপ্রক্রিয়া আরও সহজ করতে সক্ষম সুবিধাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করছে।
সার্কেল টু সার্চ ব্যবহার করে গান শনাক্তের সময় পর্দায় বর্তমানে একটি ছোট মিউজিক আইকন দেখা যায়। কিন্তু নতুন সুবিধাগুলো চালু হলে মিউজিক আইকনে যুক্ত হবে একটি অতিরিক্ত বাটন, যা দেখতে অনেকটা ঘড়ির মতো। এই নতুন আইকনের মাধ্যমে সরাসরি প্রবেশ করা যাবে ‘রিসেন্ট সং সার্চ’ নামের একটি মেনুতে। ফলে ব্যবহারকারী সহজেই আগে শনাক্ত করা গানের তালিকা দেখতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, এখানে গানের শিরোনাম, শিল্পীর নাম এবং অ্যালবামের ছবিও দেখা যাবে।
সার্কেল টু সার্চের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে অনুবাদ সুবিধায়। বর্তমানে কোনো লেখাকে চিহ্নিত করার পর তা অনুবাদ করতে চাইলে ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে হয়। নতুন সুবিধা চালু হলে সার্কেল টু সার্চে কোনো লেখা ট্যাপ করলেই সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদের বাটন পর্দায় দেখা যাবে।
সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ