টিএনজেড গ্রুপ: সচিবের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত শ্রমিকদের
Published: 30th, March 2025 GMT
টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা শনিবার পর্যন্ত তাঁদের বকেয়া বেতন ও পাওনা পাননি। কারখানার শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আপাতত তিন কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। শ্রমিকেরা শুরুতে তা প্রত্যাখ্যান করলেও পরে মেনে নিয়ে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন।
এদিকে শিল্প পুলিশ ও পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, কিছু কারখানা ছাড়া বাকিগুলোর শ্রমিকেরা মার্চের অর্ধেক বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত বেশির ভাগ কারখানায় ছুটি হয়েছে। অবশ্য বেতন-ভাতার দাবিতে টিএনজেডের শ্রমিকেরা শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন , যা শুরু হয়েছিল ২৩ মার্চ।
টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রুপটির তিনটি কারখানা বন্ধ। এসব কারখানার ৩ হাজার ১৬৬ জন শ্রমিকের পাওনা প্রায় ১৭ কোটি টাকা। গত বৃহস্পতিবার একটি কারখানার শ্রমিকদের পাওনার একটি অংশ দেওয়া হয়।
পুলিশ গত বৃহস্পতিবার টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক শরীফুল ইসলাম শাহীনকে হেফাজতে নিয়েছিল। তিনি কারখানার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে জানানো হয়েছিল। বেতন-ভাতা পরিশোধের কথা ছিল গতকাল।
এদিন বিকেলে টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক শরীফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। বৈঠকে শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক বলেছেন যন্ত্রপাতি বিক্রি করে আপাতত দুই কোটি টাকা দেবেন। ঈদের পরে ৮ এপ্রিল আবার বৈঠক হবে। তিনি যতক্ষণ না শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছেন, ততক্ষণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকবেন।
সচিবের তিন কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাসে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছেশহীদুল ইসলাম, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সমন্বয়কশ্রমিকেরা সচিবের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন এবং বৈঠক শেষে শ্রমসচিব শ্রম ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়ি অবরোধ করেন। পরে সচিব আবার বলেন, ‘.
যদিও শ্রমিকেরা ২৩ মার্চ থেকে পাওনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে সরকারের দিক থেকে পাওনা আদায়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শুরুতে সচিবের বক্তব্য আন্দোলনকারী প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে গত রাতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সমন্বয়ক শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সচিবের তিন কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাসে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।
শ্রম ভবনে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন না দিতে পারলেও আপাতত যেন এক মাসের বেতন ও বোনাস যাতে দেওয়া হয়। তাহলে অন্তত শ্রমিকেরা বাড়িতে গিয়ে কোনো রকম ঈদ করতে পারবে। তবে লিখিত দিতে হবে দ্রুত তাঁদের বকেয়া বেতন পরিশোধের।’
প্রায় সব কারখানা বেতন-ভাতা দিয়েছে
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, সংগঠনটির সদস্য ৯৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ সচল কারখানা ঈদের বোনাস এবং ৯৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ কারখানা মার্চ মাসের অর্ধেক বা পুরো বেতন পরিশোধ করেছে।
শিল্প পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুসারে যে ২৪৫টি কারখানায় সমস্যা হতে পারে বলে জানা গিয়েছিল, তার সব কটিই পরিদর্শন করেছে বিজিএমইএ। পরিদর্শন শেষে মাত্র ছয়টি কারখানায় সমস্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা। সেগুলোতে বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছিল।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেম বলেন, একটি ছাড়া বাকি সব কারখানার শ্রমিকদের ঈদের বোনাস ও বেতন দেওয়া হয়েছে। যে কারখানা তা দিতে পারেনি, তারা শ্রমিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ফয়সালা করেছে।
প্রতিবছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় পোশাক কারখানাগুলোতে শেষ সময়ে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। কিছু কারখানা নিয়ে সংকট তৈরি হয়।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় ভরপুর ক্রয়াদেশ আছে। এরপরও বেতন-ভাতা নিয়ে যা হচ্ছে, তা দুঃখজনক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট এনজ ড গ র প র পর শ ধ র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) এর ২০২৫-২৭ মেয়াদের জন্য নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান খান (বাবু)। এছাড়া সাতজন সহসভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
আজ শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে নতুন সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিজিএমইএর নির্বাচন বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনে আটটি অফিস বেয়ারার পদে আটজন প্রার্থী নমিনেশন জমা দেন। বোর্ড তা যাচাইবাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। কোনো পক্ষ আপিল না করায় নির্বাচন বোর্ড নমিনেশন দাখিল করা প্রার্থীদের সবাইকে অফিস বেয়ারার পদে নির্বাচিত ঘোষণা করে।
নতুন কমিটিতে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কেডিএস গ্রুপের এমডি সেলিম রহমান। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অনন্ত গার্মেন্টসের এমডি ইনামুল হক খান। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সফটেক্স সোয়েটারের এমডি মো. রেজওয়ান সেলিম, ফেব্রিকা নিট কম্পোজিটের এমডি মিজানুর রহমান (অর্থ), দেশ গার্মেন্টসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান, এমিটি ডিজাইনের এমডি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী এবং ফ্যাশন ওয়্যারের এমডি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী।
নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটি আগামীকাল সোমবার দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।
গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত বিজিএমইএর নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৫৬১ এবং চট্টগ্রামে ৩০৩ জন ভোটার। তার মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে বিজিএমইএর ৩৫ পরিচালক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত এসব পরিচালকদের মধ্য থেকেই নির্বাহী পর্ষদ গঠিত হয়।
এবারের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ ইকবাল। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন সৈয়দ আফজাল হোসেন ও আশরাফ আহমেদ।
বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন অন্তর্বর্তীকালীনভাবে বিজিএমইএর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন।