বাংলাদেশের আকাশে আজ রবিবার পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে, আগামীকাল সোমবার (৩১ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া শনিবার সকালে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, এবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস নেই। তারপরও কোনো কারণে আবহাওয়া খারাপ হলে জাতীয় ঈদগাহের পরিবর্তে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে।
ডিএসসিসির প্রশাসক আরো বলেন, এবার জাতীয় ঈদগাহে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। মুসল্লিদের জন্য অজু করার জায়গা, শৌচাগার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ঈদের প্রধান জামাত হবে আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে (বাণিজ্য মেলার পুরনো মাঠ) সকাল সাড়ে ৮টায়।
বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। এরপর এক ঘণ্টা পর পর একটি করে জামাত হবে। শেষ জামাত হবে সকাল পৌনে ১১টায়।
গত বুধবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদের দিন সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাত হবে।
সকাল ৭টায় প্রথম ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো.
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঈদের ১২ জামাত
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঈদের নামাজের ১২টি জামাত হবে। প্রথম জামাত হবে মারকাজুল ফিকরিল ইসলামীতে (বড় মসজিদ) সকাল ৭টায়, উম্মে কুলসুম জামে মসজিদে (সি ব্লক) সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে, এফ ব্লক জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে (জি ব্লক) ৭টা ৪৫ মিনিটে, মদিনাতুল উলুমে (কে ব্লক) সকাল ৮টায়, ফকিহুল মিল্লাত জামে মসজিদে (এন ব্লক) সকাল সাড়ে ৮টায়, বায়তুল আবরার জামে মসজিদে (এম ব্লক) ৭টা ১৫ মিনিটে, আল আকসা জামে মসজিদ (আই ব্লক) ৭টা ১৫ মিনিটে, বাইতুল কারীম জামে মসজিদে (এল ব্লক) ৭টা ৪৫ মিনিটে, এল ব্লক জামে মসজিদ (এল ব্লক) ৮টা ১৫ মিনিটে, বাইতুস সালাম জামে মসজিদে (এল ব্লক) ৮টায় এবং বায়তুর রহমান জামে মসজিদে (এল ব্লক) সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের নামাজের দুটি জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদ, ড. শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হলে সকাল ৮টায় ঈদুল ফিতরের পৃথক তিনটি জামাত হবে।
ধানমন্ডি এলাকায় ৭ নম্বর রোডের বায়তুল আমান জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, ১৪ নম্বর রোডের সোবহানবাগ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়, ৬ নম্বর রোডের ঈদগাহ জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, ৩ নম্বর রোডের এনায়েত মসজিদে সকাল ৮টায় এবং তাকওয়া মসজিদে ঈদের দুটি জামাত সাড়ে ৭টা এবং ৮টায় হবে।
মিরপুর-১ এ টোলারবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত হবে। মিরপুর-১ বাসস্ট্যান্ড বড় মসজিদে সকাল ৮টায়, শাহ আলী জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায়, মিরপুর ১২ নম্বরের ডি ব্লক ঈদগাহ মাঠে সাড়ে ৭টায়, ২ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারের লাল মাঠে সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত হবে। লালবাগ শাহি মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত হবে।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা পর্ষদ সূত্র জানিয়েছে, শোলাকিয়ায় এবার ১৯৮তম ঈদের জামাত হবে। নামাজ শুরু হবে সকাল ১০টায়।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ঈদগ হ ১৫ ম ন ট এল ক য় প রথম মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।”
এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক।
উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”
তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।”
চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”
চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”
মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।