বেলুচিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বাংলাদেশ হচ্ছে?
Published: 31st, March 2025 GMT
বেলুচিস্তানে জাতিগত অসন্তোষ অনেক দিনের। সেই অসন্তোষ এখন ক্রমে অগ্নিকাণ্ডের আকার নিচ্ছে।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাকিস্তানের এ প্রদেশ বিশ্বজুড়ে বেশ নজর কেড়েছিল। এখন চলছে, বড় আকারে নাগরিক প্রতিবাদ।
ছিনতাই হওয়া জাফর এক্সপ্রেস নামের ট্রেন ও তার যাত্রীদের উদ্ধার অভিযানে বিপুল মানুষ মরেছে সেখানে। সরকার বলছে, সংখ্যাটা প্রায় ১০০। বিএলএ (বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি) গেরিলারা বলছে, তারা সরকারি জওয়ানই মেরেছে প্রায় ২০০। ট্রেনে সাড়ে ৪৫০ যাত্রীর অর্ধেক ছিলেন বিভিন্ন রক্ষীদলের সদস্য।
বিশ্বজুড়ে জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাকের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। বেলুচ গেরিলারা সমরবিদ্যায় কীভাবে এত দক্ষ হলো, সে নিয়ে অনুসন্ধানের শেষ নেই। পাকিস্তান সরকারের ইঙ্গিত ভারত ও আফগান সরকারের দিকে।
ছিনতাইয়ের ঘটনার পর বেলুচিস্তানজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক দমন-পীড়ন। ছিনতাই অধ্যায় দমনকালে নিহত বেলুচদের জানাজা পড়ায়ও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ সেখানেও গুলি করে। তাতেও অনেক মানুষ মরেছেন। দ্বিতীয় দফা রক্তপাতের প্রতিবাদে এখন শুরু হয়েছে কোয়েটামুখী লংমার্চ। এরই মধ্যে বেলুচ নাগরিক আন্দোলনের বিখ্যাত নেত্রী মাহরাঙ বেলুচকে আটক করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের আগে ডা.
বর্তমান অবস্থায় নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অহিংস উপায়ে কাজ চালানো কঠিন এখানে। বেলুচ ন্যাশনাল পার্টির একটা অংশের প্রধান হলেন আখতার মেঙ্গল। এ সপ্তাহের লংমার্চের তারাই আয়োজক। ট্রেন হাইজ্যাক–পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি দৈনিক ডনকে বলছিলেন, ‘আমাদের প্রতি পশুর মতো আচরণ করা হচ্ছে।’ বেলুচিস্তানে প্রাদেশিক সরকার চালাচ্ছে এখন ভুট্টোদের পিপলস পার্টি। জুলফিকার আলী ভুট্টো এ দলের প্রধান থাকাকালেই ১৯৭০–এর নির্বাচনের পর পূর্ব পাকিস্তানে দমন-পীড়ন শুরু হয়েছিল। এ কারণেও কেউ কেউ বলছেন, বেলুচিস্তান ‘দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বাংলাদেশ’ হচ্ছে কি না।
চলমান পরিস্থিতির একটা বড় কারণ বেলুচরা পাকিস্তানের জাতীয় নীতিনির্ধারণে প্রত্যাশিত গুরুত্ব পায়নি। আবার নিজ প্রদেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলাতেও ইসলামাবাদের মতামতই শেষ কথা।
এখানকার আজকের সংকটে ১৯৭১ সালের কথা বারবার এলেও উভয় বাস্তবতার সবটুকু একরকম নয়। পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে। বেলুচিস্তান সে রকম বিচ্ছিন্ন নয়। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকেরা ও সশস্ত্র বাহিনী যোগাযোগের যে সমস্যায় পড়ত, বেলুচিস্তানে সেটা নেই। ফলে এখানে তারা কোণঠাসা হতে প্রস্তুত নয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও চীনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলায় কিছু সফলতা পেলেও বিএলএ গেরিলাদের একটা মুশকিলের দিক হলো বড় আকারে গেরিলা বাহিনী গড়ার মতো জনশক্তি তাদের নেই। তাদের শক্তির তুলনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক বড় প্রতিপক্ষ। আশপাশের কোনো শক্তিশালী দেশ থেকে তাদের সাহায্য পাওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে গেরিলাযুদ্ধকে একটা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করে বিজয়ী হওয়া বেলুচদের জন্য দুরূহ।আবার বেলুচিস্তানে যুদ্ধ করার মতো বেলুচ জনবল পাকিস্তানের অ-বেলুচদের তুলনায় সামান্য। এলাকাটা পূর্ব পাকিস্তানের মতো বন-ঝোপঝাড়-নদীনালাময়ও নয়। মূলত মরুভূমিধর্মী এবং খোলামেলা পাহাড়ি এলাকা। গেরিলাদের লুকিয়ে থাকার মতো জায়গা কম। এ রকম বেলুচিস্তান ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ’ হওয়া একটা অতিদূরবর্তী কল্পনা। তবে জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাই হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের আর্মি ও সরকার উভয়ে এ ঘটনার পেছনে ভারতের ভূমিকার কথা বলছে। তারা এ–ও বলছে, ১৯৭১ সালে ভারত যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সহায়তা করেছে, এখন সেটাই করছে বেলুচদের।
এ রকম দাবিতে মুশকিলের দিক হলো, পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তিন দিকে সীমান্ত ছিল। সহযোগিতা করতে পেরেছিল তারা। কিন্তু বেলুচিস্তানের সঙ্গে ভারতের সরাসরি সীমান্ত নেই। বেলুচদের সীমান্ত হলো ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে।
ইরান রাষ্ট্র হিসেবে তার এলাকার বেলুচ স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। ফলে সে পাকিস্তানভুক্ত বেলুচদের একই লক্ষ্যে সাহায্য করবে, এমন ভাবা যায় না। আফগানিস্তানের এখনকার শাসকদেরও বেলুচ স্বাধীনতাকামীদের পছন্দ করার কারণ নেই। আদর্শ ও সংস্কৃতিতে বেলুচদের সঙ্গে পশতু তালেবানদের মিল নেই। বেলুচ স্বাধীনতাসংগ্রামীরা অনেকটাই ধর্মনিরপেক্ষ জায়গায় দাঁড়িয়ে লড়ছে। তালেবানদের সেটা পছন্দ হওয়ার কারণ নেই। আবার ইরান ও আফগানিস্তানের এখনকার শাসকেরা ভারতের এতটা ঘনিষ্ঠও নয় যে ভারতের সাহায্য নিয়ে তারা বেলুচদের হাতে দেবে। সুতরাং পাকিস্তানের এ দাবি তেমন সাক্ষ্যপ্রমাণ পায়নি যে জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাই বা অন্যান্য গেরিলা আক্রমণে ভারত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের দিক থেকে বেলুচ গেরিলাদের দমনে একটা মুশকিলের দিক হলো ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন মোটেও ভালো নেই। ফলে তেহরান ও কাবুলের শাসকদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে বেলুচদের দমন করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে পশতুপ্রধান আফগান তালেবান সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক খুব খারাপ যাচ্ছে। বেলুচদের নিয়ে কিছুদিন আগে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যেও মিসাইল ছোড়াছুড়ি হয়ে গেল। এসব মিলে বলা যায়, আঞ্চলিকভাবে গণচীন ছাড়া বেলুচ প্রশ্নে পাকিস্তানের শাসক ও সেনাবাহিনীর পাশে আর কেউ নেই। বিপরীতে বেলুচদের পাশে ইরান ও আফগানিস্তানের বেলুচদের সহানুভূতি আছে। আর ভারত সুযোগ পেলে সরাসরি না হোক, পরোক্ষ কিছু সহায়তা বেলুচদের যে করবেই, তাতে সন্দেহ নেই। সেটা তার পাকিস্তানবৈরী পররাষ্ট্রনীতির কারণে হবে।
বেলুচ বিদ্রোহ প্রশ্নে চীন পাকিস্তানের পাশে আছে। প্রদেশটিতে রয়েছে চীনের বিপুল বিনিয়োগ। তারা সেখানে অর্থনৈতিক করিডর বানিয়েছে। তাদের বৈশ্বিক বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বড় এক ইউনিট এটা। বেলুচদের গদার সমুদ্রবন্দর চীনাদের কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব অর্থনৈতিক স্বার্থ নির্বিঘ্ন রাখতেই বেইজিং এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সফলতা চায়। তারা এখানে নিজ সৈনিকদেরও আনতে চায় নিজেদের জানমাল রক্ষায়। তাদের বিনিয়োগ রক্ষার জন্য পাকিস্তান সরকার যে বেলুচদের সঙ্গে সংঘাত বাড়িয়ে চলেছে, অসংখ্য বেলুচ তরুণ-তরুণী যে গুম হয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে চীনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যায় না।
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। দেশের প্রায় ৪৪ শতাংশ। জায়গার তুলনায় এখানে লোকসংখ্যা কম—এক কোটি মতো। অথচ মাটির নিচে খনিজ আছে অনেক। আছে সুন্দর একটা সমুদ্র উপকূল। খনিজগুলো তোলা এবং বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসাপাতি বাড়াতে বড় বিনিয়োগ দরকার ছিল। সে জন্যই চীনকে এখানে এনেছে ইসলামাবাদের সরকার। কিন্তু স্থানীয় এতসব অর্থনৈতিক সুবিধা কাজে লাগাতে গিয়ে পাকিস্তানের শাসকেরা বেলুচদের তাতে যুক্ত করেনি। দরিদ্র বেলুচরা তাই পাকিস্তানের শাসকদের পাশাপাশি চীনেরও বিরুদ্ধে। চীন এখানে খুবই অপছন্দের শিকার। অনেক চীনা নাগরিক বেলুচদের হাতে মারাও পড়েছেন।
তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও চীনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলায় কিছু সফলতা পেলেও বিএলএ গেরিলাদের একটা মুশকিলের দিক হলো বড় আকারে গেরিলা বাহিনী গড়ার মতো জনশক্তি তাদের নেই। তাদের শক্তির তুলনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক বড় প্রতিপক্ষ। আশপাশের কোনো শক্তিশালী দেশ থেকে তাদের সাহায্য পাওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে গেরিলাযুদ্ধকে একটা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করে বিজয়ী হওয়া বেলুচদের জন্য দুরূহ। কিন্তু সেই অধরা স্বপ্নের পেছনে ছুটতে বেলুচ তরুণ-তরুণীদের বাধ্য করছে প্রদেশটির অসহনীয় বাস্তবতা। পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তিমূলক একটা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে না ওঠা এ বাস্তবতা তৈরি করেছে। এ রকম সংকট দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব রাষ্ট্রে আছে। এ সংকটে পড়েই একদা পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হলো। ১৯৭১-এর মার্চ ও ২০২৪-এর মার্চের শিক্ষাটা প্রায় একই আছে।
উপনিবেশিক অতীতের ভেতর বেলুচদের স্বাধীনতার দাবির আরেকটা শক্ত সমর্থন আছে। ব্রিটিশ আমলে তাদের এলাকায় আপেক্ষিক স্বাধীনতা ছিল। তিনটি প্রিন্সলি স্টেট ছিল এখানে। কালাত নামের রাজ্যটি ছিল বেশ বড়সড়, ১৯৪৮ সালে যাকে ‘জোরপূর্বক’ পাকিস্তান রাষ্ট্রভুক্ত করা হয় বলে স্থানীয়দের দাবি। পাশাপাশি বেলুচরা এ–ও মনে করে, বেলুচিস্তান বলতে যে ভূখণ্ড বোঝায়, সেটা তিনটি দেশে বিভক্ত হয়ে আছে। সেই পুরোনো অঞ্চল এক করাও তাদের অধরা স্বপ্নের অংশ।
এ রকম স্বপ্নের জাল বুনে চলেছে আফগানিস্তান থেকে বার্মা পর্যন্ত বহু জাতি। এসবই হলো সাত থেকে আট দশক আগে কৃত্রিম সীমান্ত সৃষ্টির বেদনাদায়ক জের।
ঐতিহাসিক সেই বেদনার সূত্রে এ অঞ্চল সংঘাত-সংহতির নতুন বিশ্ব–ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠার লক্ষণ আছে। কিন্তু এ অঞ্চলের ‘রাষ্ট্রনায়কেরা’ সেই শঙ্কা কমাতে জাতিগত অসন্তোষ থামাচ্ছেন না কেন?
● আলতাফ পারভেজ গবেষক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ধ নত ন সরক র ছ নত ই এ রকম র একট
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।