এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায়। পাঁচ লক্ষাধিক মুসুল্লীর অংশগ্রহণে ১৯৮তম ঈদের জামাতে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ছিল পরিপূর্ণ। 

কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে মাঠের ভেতরের কাতার উপচে বাইরেও কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঈদগাহ ময়দান। নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। 

সোমবার (৩১ মার্চ) ভোরের আলো ফোটার আগেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। চার স্তরের অধিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। সকাল ৯টার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে জামাতে ছাতা, লাঠিসোটা, দিয়াশলাই কিংবা লাইটার নিয়ে মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বড় জামাতে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়-এমন বিশ্বাস থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। 

এদিন সকাল ১০টায় ঈদ-উল-ফিতরের জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে ইমামতি থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে। এবার নতুন করে আবার পুনর্বহাল করায় তিনিও অন্যন্ত আনন্দিত।

মুসল্লিদের ঢল শুরু হয় ভোর থেকেই। ঈদগাহমুখী সব রাস্তাঘাটে কয়েক ঘণ্টার জন্য যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামাত শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। অনেকে আবার মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাসাবাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হয়েছেন।

অন্যদিকে নারীদের জন্য শহরের সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। সেখানেও বহু নারী ঈদ জামাতে অংশ নেন।

নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।

কুমিল্লা থেকে এবারই প্রথম এ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন কবির উদ্দিন ভূইয়া (৫৩)। তিনি গত রাতেই এসেছেন, উঠেছেন একটি আবাসিক হোটেলে। 

তিনি বলেন, “বহু বছর ধরে এ মাঠের সুখ্যাতি শুনে আসছি। এবার আল্লাহ দরবারে নিয়ত করেছিলাম, তিনি আমার আশাপূর্ণ করেছেন। খুব ভালো লাগলো এখানে এসে। লাখ লাখ মুসুল্লীর সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।”

মাঠের সুনাম ও নানা জনশ্রুতির কারণে ঈদের কয়েক দিন আগেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে। এদের অনেকেই উঠেছিলেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মিম্বরে।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রহমত ব্যাপারী (৬৫)। ভোরে পরিবারের পাঁচজনকে সাথে ট্রেনযোগে পৌছান শোলাকিয়া মাঠে। প্রতিবছরই তারা এ মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেন। তিনি বলেন, “রোদ-বৃষ্টি বুঝি না। শুধু জানি যতদিন বেঁচে আছি-এখানে আসতেই হবে। এখানে এলে অন্যরকম এক শান্তি খুঁজে পাই। বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে আল্লাহতালা মনের আশাও পূরণ করেন।”

দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি ট্রেন চালু ছিল। ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে এ দুটি বিশেষ ট্রেন সকালে জামাতের আগে কিশোরগঞ্জে পৌঁছায়। এছাড়া মুসল্লিদের ওজু ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, মেডিক্যাল টিম, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা ছিল শোলাকিয়া মাঠে। 

কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী (বিপিএম) জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার কথা মাথায় রেখে মাঠে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জামাতের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার।

নিরাপত্তার কাজে প্রথমবারের মতো এবার যুক্ত ছিল সেনাবাহিনীও। মাঠে ছিল ড্রোন ও মাইনো কোলারসহ ভিডিও ক্যামেরা। মাঠ ও শহরসহ প্রবেশ পথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া মাঠে ছিল ছয়টি ওয়াচ। সেখান থেকে দূরবীন নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। 

নামাজ শুরু করার সঙ্কেত হিসেবে রেওয়াজ অনুযায়ী শোলাকিয়ার ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিটি আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, শোলাকিয়ার সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজ জমিতে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ঈদের প্রথম জামাতে তখন সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং সেখান থেকে শোলাকিয়া শব্দটি প্রচলিত হয়েছে।

ঢাকা/রুমন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ র জ ম ত ক শ রগঞ জ ঈদগ হ ম

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

দিনাজপুরে বিরামপুর সীমান্ত দিয়ে ৯ শিশুসহ ১৫ জন জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের অচিন্তপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

বিজিবির ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ বি এম জাহিদুল করিম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জাহিদুল করিম জানান, গতকাল রাত আড়াইটার দিকে অচিন্তপুর সীমান্তের ২৮৫ নম্বর সীমানা পিলার এলাকায় হঠাৎ আলো নিভিয়ে দেয় বিএসএফ। এ সময় সেখানে বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত টহলে ছিলেন। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা ১৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেন। পরে বিজিবি ২৯ ফুলবাড়ী ব্যাটালিয়নের আওতায় অচিন্তপুর বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের আটক করে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। আটক ১৫ জনের মধ্যে ৩ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ, বাকিরা শিশু। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সবাই নড়াইলের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর কয়েকজনের কাছ থেকে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও নগদ অর্থ কেড়ে নেন বিএসএফ সদস্যরা।

বিজিবি জানায়, ওই ১৫ জন বর্তমানে অচিন্তপুর বিওপি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তাঁদের বিষয়ে পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

এর আগে বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট ও ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে ৮৬ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। সিলেটের জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ছাতক, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে তাঁদের ঠেলে পাঠানো হয়। তাঁদের আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। বিজিবির সদর দপ্তর সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ২১০ জনকে পুশ–ইন করেছে ভারত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • ‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
  • কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ময়মনসিংহে স্বস্তির বৃষ্টি
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
  • নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
  • তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন, এর পর বৃষ্টি
  • গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জানালেন সমু চৌধুরী
  • দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • ‘দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই প্রতিবাদ করলে অপমানিত হতে হয়’