মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় তিন মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকার বাবুখাঁর ব্রীজ এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো, শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি এলাকার মো. শাহজাহান তালুকদারের ছেলে মিঠুন (২৫) ও শরীয়তপুরের পদ্মাসেতুর দক্ষিণ থানার ঢালিকান্দি এলাকার বাবুল ঢালীর ছেলে হৃদয় ঢালী (১৯) ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ সময় জাজিরার জয়নগর এলাকার মঞ্জু সরদারের ছেলে রমজান (২১) এবং ইসকান খানের ছেলে অলি খান (২২) গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মারা যায়।

দুপুরে বেপরোয়া গতিতে তিনটি পরস্পর বিপরীতমুখী মোটরসাইকেলের বাবুখাঁর ব্রীজের কাছে সংঘর্ষ হয়। ঈদ পরবর্তী সময়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মাসেতু এলাকায় ঘুরতে বের হন ওই যুবকেরা। প্রথমত দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তাৎক্ষণিক আরেকটি মোটরসাইকেল চলে এলে সেটিও সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলে মিঠুন ও হৃদয় ঢালীর মৃত্যু হয়। পরে অলি খান ও রমজানের মৃত্যু হয়। বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।  

আরো পড়ুন:

অসুস্থ স্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হলো না কনস্টেবল রনির

‘ঈদযাত্রায় এবারের মতো স্বস্তি আর কখনো পাইনি’

পদ্মাসেতুর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান,  দুর্ঘটনা শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঘটেছে। এতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকার তিন জন ও শিবচরের একজন।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ জানান, বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

ঢাকা/বেলাল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন ন হত দ র ঘটন শ বচর র স ঘর ষ এল ক র ব পর য়

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ