বেপরোয়া গতির ৩ মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, ৪ যুবক নিহত
Published: 1st, April 2025 GMT
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় তিন মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকার বাবুখাঁর ব্রীজ এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো, শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি এলাকার মো. শাহজাহান তালুকদারের ছেলে মিঠুন (২৫) ও শরীয়তপুরের পদ্মাসেতুর দক্ষিণ থানার ঢালিকান্দি এলাকার বাবুল ঢালীর ছেলে হৃদয় ঢালী (১৯) ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ সময় জাজিরার জয়নগর এলাকার মঞ্জু সরদারের ছেলে রমজান (২১) এবং ইসকান খানের ছেলে অলি খান (২২) গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মারা যায়।
দুপুরে বেপরোয়া গতিতে তিনটি পরস্পর বিপরীতমুখী মোটরসাইকেলের বাবুখাঁর ব্রীজের কাছে সংঘর্ষ হয়। ঈদ পরবর্তী সময়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মাসেতু এলাকায় ঘুরতে বের হন ওই যুবকেরা। প্রথমত দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তাৎক্ষণিক আরেকটি মোটরসাইকেল চলে এলে সেটিও সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলে মিঠুন ও হৃদয় ঢালীর মৃত্যু হয়। পরে অলি খান ও রমজানের মৃত্যু হয়। বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
অসুস্থ স্ত্রীর কাছে পৌঁছানো হলো না কনস্টেবল রনির
‘ঈদযাত্রায় এবারের মতো স্বস্তি আর কখনো পাইনি’
পদ্মাসেতুর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, দুর্ঘটনা শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঘটেছে। এতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকার তিন জন ও শিবচরের একজন।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ জানান, বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।
ঢাকা/বেলাল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন ন হত দ র ঘটন শ বচর র স ঘর ষ এল ক র ব পর য়
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।