চিকিৎসা ছাড়া মায়ের কোলে ফিরল সেই শিশু
Published: 2nd, April 2025 GMT
বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলার তীরে উদ্ধার হওয়া পরিচয়হীন সেই নবজাতক ফিরেছে আপন ঠিকানায়। বাবার কোলে চড়ে গত রোববার রাতে (ঈদের আগের দিন) ঢাকা থেকে বাগেরহাটে মায়ের কোলে পৌঁছায়। শিশুটি এখন মায়ের কাছে রয়েছে। তবে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় শিশুটিকে বাড়ি ফিরতে হয়।
শিশুটির বাবা বাগেরহাট শহরে ফুটপাথের চা দোকানি গণেশ শ্যাম আজ বুধবার বিকেলে সমকালকে বলেন, গত রোববার দুপুরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে রিলিজ দেয়। ওই রাতে তিনি ও তার শাশুড়ি সুমি দাস বাসে শিশুটিকে নিয়ে বাগেরহাটের বাসায় পৌঁছান।
রিলিজ দেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গণেশ জানান, শিশুটির পিঠের টিউমার নিরসনে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু, একমাস বয়স হওয়ার আগে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। যেহেতু শিশুর বয়স এক সপ্তাহ হয়েছে। তাই, আরও তিন সপ্তাহ পর ঢামেকে ভর্তির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।
শিশুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বাবা গণেশ বলেন, পিঠের টিউমার থেকে পানি বের হচ্ছে। বাগেরহাটের স্থানীয় চিকিৎসকদের চিকিৎসা নিতে যোগাযোগ করছি। কিন্তু, ঈদের ছুটি হওয়ায় কোনো চিকিৎসক পাচ্ছেন না। এজন্য আগামী শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে নগরীর সংলগ্ন কীর্তণখোলার তীরে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় পরিত্যক্ত বাথরুমে অজ্ঞাত নবজাতক উদ্ধার হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ফুচকা বিক্রেতা পারভীন বেগম শিশুটিকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান। গত ২৮ মার্চ শিশুটির অভিভাবকের সন্ধান পাওয়া যায়। তার আগের দিন (২৭ মার্চ) উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বাবা গণেশ দত্ত জানান, বরিশাল নগরীর সদর রোড মোখলেসুর রহমান ক্লিনিকে ২১ মার্চ স্ত্রী অন্তরা দাস সিজারের মাধ্যমে শিশুটির জন্ম দেন। এটি তাদের প্রথম সন্তান। জন্মগতভাবেই পিঠের মেরুদণ্ড টিউমার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিনই নবজাতককে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলো। ব্যয়বহুল চিকিৎসা ও পুরো সুস্থ্য না হওয়ার আশঙ্কায় পরদিন ২২ মার্চ দুপুরে ওয়ার্ডে বসেই শিশুটিকে এক রিক্সাচালকের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর তাদের আর কিছু জানা নেই।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা.
বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, শিশুটির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এজন্য কেউ সাহায্যে করতে চাইলে তার মুঠোফোন ০১৭১৫-৫৪৫১৪৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব গ রহ ট বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত
বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নির্বাচনকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের একটি অংশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকেরা। তবে ভোটার তালিকার কিছু ত্রুটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন ৯ আগস্ট। নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্যানেলের পক্ষে সভাপতি ও মহাসচিব পদে দাঁড়িয়েছেন যথাক্রমে অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে সভাপতি ও মহাসচিব প্রার্থী যথাক্রমে অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খান। হারুন আল রশিদ ২০১৯ সাল থেকে ড্যাবের সর্বশেষ কমিটির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। আর অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক এর আগের ১৪ বছর অর্থাৎ ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ড্যাবের সভাপতি ছিলেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।পেশাজীবী চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) থাকার পরও প্রায় প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের চিকিৎসকদের পৃথক সংগঠন আছে। বিএনপির আছে ড্যাব, তেমনি জামায়াতের আছে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। এক বছর আগে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ছিল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।
নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।ভোটার তালিকায় ৩ হাজার ১৩৯ জনের নাম আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় কিছু ত্রুটি আছে। ড্যাবের আজীবন সদস্য—এমন কিছু চিকিৎসকের নাম তালিকায় নেই। আবার মারা গেছেন—এমন চিকিৎসকদের নাম তালিকায় আছে। অন্যদিকে নতুন যে তিন শর মতো চিকিৎসক সদস্য হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যাঁরা বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ নিয়ে কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টি দেখা গেলেও প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা করছেন না বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও কেউ বলছেন না।
ড্যাবের নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আর কিছু করার নেই। যা আছে তা মেনে নিয়েই সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে।’
প্রায় দেড় দশকে দেখা গেছে, ড্যাবের মধ্যেও দুটি ধারা বা পক্ষ আছে। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শিশু হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাবের মধ্যেই দুটি পক্ষ স্পষ্ট। একটি পক্ষ ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের অনুসারী। অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খানের প্যানেলটি এদিকে আছে। জাহিদ হোসেন–বিরোধী বলে পরিচিত ড্যাবের সদস্যদের একটি অংশ আছে প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল প্যানেলে।
ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেনগতকাল দুই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ কে এম আজিজুল হক ও হারুন আল রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।