জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন কার্যালয়ে জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে আমরা খসড়া প্রতিবেদনটি পেয়েছি। প্রতিবেদনে একাধিকবার অপরাধের তথ্যের প্রমাণ মিলেছে। খসড়ার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। এরপর অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে। পরবর্তীতে অভিযোগ গ্রহণ করবেন ট্রাইব্যুনাল। সব মিলিয়ে ফরমাল চার্জ গঠনের মধ্যে দিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে-এমন প্রত্যাশা করেন সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তিনটি মামলার খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। চলতি মাসে আরও একটি খসড়া প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে চারটি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন চিফ প্রসিকিউটর।

এর আগে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনের খসড়া গত ২৭ মার্চ প্রসিকিউশন কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। সাভারের আশুলিয়ায় ৬ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় গণহত্যার মামলায় স্থানীয় এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের খসড়া প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়। এই দুটি প্রতিবেদন চুড়ান্তভাবে প্রস্তুত করে ট্রাইব্যুনালে দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সরাসরি নির্দেশদাতা হিসেবে থাকছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের এসব আদেশ বাস্তবায়নকারি হিসেবে সাবেক পুলিশ প্রধান চেৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। গত ১৬ মার্চ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার অপরাধের প্রথম মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সহযোগী আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। গত ১৮ মার্চ মামুনকে তদন্ত সংস্থার সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সম্ভাব্য দুই আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে এবং সাবেক আইজিপি মামুন কারাগারে আছেন। 

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুই মাস পর ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সংগে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল শুনানিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে প্রথমে একমাস সময় দেওয়া হয়। এরপর আরও ২ মাস সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আরও ২ মাস সময় বাড়ান ট্রাইব্যুনাল। সেই হিসেবে আগামী ১৮ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিলেন, ২ মাস সময় হয়তো লাগবে না, এক মাসের মধ্যেই প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তদন্ত সংস্থা থেকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে প্রথম মামলার খসড়া প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণহত য গণঅভ য ত থ ন গণহত য র তদন ত স ম স সময় অপর ধ র খসড় আগস ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী