খেলাধুলায় কুসংস্কার নতুন কিছু নয়। অনেক খেলোয়াড়ের অনেক রকম কুসংস্কার আছে। তবে ম্যানচেস্টার সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এদেরসনের কুসংস্কার শুনলে একটু অবাক হওয়ার পাশাপাশি অদ্ভুতও লাগতে পারে।

বিবিসির ‘ফুটবল ফোকাস’ অনুষ্ঠানে এদেরসন জানিয়েছেন, আট বছর ধরে প্রতি ম্যাচে তিনি একই অন্তর্বাস পরছেন। ৩১ বছর বয়সী গোলকিপারের ভাষায়, ‘আমার একটি মাত্র কুসংস্কারই আছে। একই অন্তর্বাস পরে সব ম্যাচ খেলি।’

আরও পড়ুনবিশ্বকাপে ৬৪ দল? উয়েফা সভাপতি বললেন ‘বাজে পরিকল্পনা’৫৮ মিনিট আগে

সঞ্চালক ও ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক গোলকিপার শে গিভেন একটু অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কী, পুরো মৌসুমের জন্য একটি অন্তর্বাস?’ এদেরসনের এবার অবাক করার পালা। একটু হেসে সিটি গোলকিপার বলেন, ‘না, আট বছর ধরে একই অন্তর্বাস।’

এদেরসনের কথা শুনে আয়ারল্যান্ডের সাবেক এই গোলকিপার আরও চমকে যান। অর্থাৎ আট মৌসুম ধরে একই অন্তর্বাস পরে ম্যাচ খেলছেন এদেরসন। একটু ধাতস্ত হয়ে গিভেন বলেন, ‘বলেন কী! সেটা তো তাহলে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই।’

এদেরসন কী কারণে আট বছর ধরে একই অন্তর্বাস পরে ম্যাচ খেলছেন, তা জানাননি। পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা থেকে ২০১৭ সালে সিটিতে যোগ দেন এদেরসন। তাঁর এ কুসংস্কার যে কাজে লেগেছে, তা বোঝা যায় এদেরসনের পুরস্কারের শোকেসে তাকিয়ে। সিটির হয়ে ছয়বার প্রিমিয়ার লিগ জেতার পাশাপাশি চারবার লিগ কাপ, দুবার এফএ কাপ ও একবার করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন।

আরও পড়ুনভিএআর ‘ফুটবল ধ্বংস করছে’, কেন বললেন টটেনহাম কোচ৩ ঘণ্টা আগে

তবে চলতি মৌসুমে এই কুসংস্কার সম্ভবত এদেরসনের কাজে লাগছে না। ম্যানচেস্টার সিটি চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৮ ম্যাচ হাতে রেখে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে ২২ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে পাঁচে সিটি। শুধু এফএ কাপ জয়ের সুযোগই আছে পেপ গার্দিওলার দলের। ২৬ এপ্রিল এফএ কাপ সেমিফাইনালে সিটির প্রতিপক্ষ নটিংহাম ফরেস্ট।

সিটিতে সপ্তাহে ১ লাখ পাউন্ড বেতন পাওয়া এদেরসন দলটির হয়ে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ৩১ ম্যাচ খেলে ৪৫ গোল হজম করেছেন। লিগে ২০ ম্যাচ খেলে হজম করেছেন ২৩ গোল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ