সম্পর্কের পরিবেশ খারাপ হয়, এমন মন্তব্য এড়িয়ে চলতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান রেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘বাস্তবতার নিরীখে ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহয় ব্যক করে এই আহ্বান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সাংরিলা হোটেলে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধামন্ত্রী মোদি। এটি দুই নেতার প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।

আরো পড়ুন:

অনিশ্চয়তা কাটলো, ইউনূস-মোদি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুক্রবার

বিমসটেকে এক টেবিলে খলিল-দোভাল আলাপচারিতা

থাইল্যান্ডের রাজধানীতে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে বৈঠক করেন  মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি।

ওই বৈঠকে উভয় নেতা নিজ নিজ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের মধ্যে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়।
 
বৈঠকের পর ড.

ইউনূসকে জানানো নরেন্দ্র মোদির অবস্থানের কথা তুলে ধরে ব্রিফ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

বিক্রম মিশ্রি সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন। তারপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘জনগণ-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে’ বিশ্বাস করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। উভয় দেশের দীর্ঘদিনের সহযোগিতা যে বাস্তবিক ফল বয়ে এনেছে, তাও তিনি বিশেষভাবে বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “পরিবেশ খারাপ করে এমন কোনো বক্তব্য পরিহার করাই সর্বোত্তম।”

‘গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথাও বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত করেন মোদি।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী (মোদি) আশা প্রকাশ করেছেন, তার বিশ্বাস, দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান থাকবে; এবং দুদেশের মধ্যে দীর্ঘ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বার্থে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলোর সমাধান হবে।”

বাংলাদেশে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, “যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়মিত অন্তর্ভক্তিমূলক নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে অবগত করেছেন। জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আমরা একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে পাব। এ ব্যাপারে নির্বাচনের একটি ভূমিকা আছে, তা সবাই জানেন।”

বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের’ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সেসব ‘নৃশংসতার’ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

সংবাদ সম্মেলনে  বিক্রিম মিশ্রি বলেন, “সেখানে (বাংলাদেশে) যে অবস্থা আর তা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে যে কথাবার্তা হয়েছে, আমি আমার বক্তব্যে যেমনটি জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খোলাখুলি সামনে এনেছেন। এ বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ তিনি ব্যক্ত করেছেন। বাকি সমাজে এর যে প্রভাব, তা নিয়ে তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অবগত করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের যে দায়িত্ব, সেটা তারা পালন করবে বলে তিনি আশা করেন।”

বিক্রম মিশ্রি বলেন, সীমান্তে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধ, বিশেষ করে রাতে সীমান্ত অতিক্রম ঠেকানো সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং এগিয়ে নেওয়ার জন্য দুই দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করতে পারেন বলেও তুলে ধরেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের সভাপতিত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফোরামের নেতৃত্বে আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ফোরামের সদস্যদেশগুলোর নেতারা বিমসটেক কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক একত্রীকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে পরামর্শ প্রদান এবং সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই নেতা অন্যান্য বিষয়েও মতবিনিময় করেছেন এবং আঞ্চলিক সমন্বয়কে এগিয়ে নিতে সংলাপ এবং সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত কর ছ ন ব মসট ক সহয গ ত র জন য মন ত র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

র‍্যাগিং বন্ধ ও নিরাপত্তার দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

র‍্যাগিং বন্ধ ও নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে ‘র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস ও জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো’ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষ্কর্য চত্বর থেকে তারা এ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

মিছিলে তারা ‘শিক্ষা ও সন্ত্রাস, একসাথে চলে না’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা, হুশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

আরো পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি

কুমার নদে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ও ক্যাম্পাসে র‍্যাগিংমুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা; তথাকথিত জেলা ছাত্রকল্যাণ কমিটির নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা; জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধা শিক্ষার্থীদের হুমকি ও হেনস্তার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা।

কর্মসূচিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন পরিবেশ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার। কিছু গোষ্ঠী ছাত্রকল্যাণ কমিটির নাম ব্যবহার করে তা হরণ করছে।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতাউল্লাহ আহাদ বলেন, “নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের গুপ্ত সন্ত্রাসীরা এখনো গোপনে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোশ পরে বিভিন্ন সংগঠনে ঢুকে আবারো ট্যাগিং ও নিপীড়নের সংস্কৃতি চালু করেছে। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান রাব্বি বলেন, “কোনো শিক্ষার্থী অপরাধ করলে তার বিচার করার অধিকার কেবল প্রশাসনের। কিন্তু এখন ছাত্রকল্যাণ কমিটির নামে কিছু নেতা নিজেরাই বিচার করছে—যা সম্পূর্ণ অন্যায়।”

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান তানজিল হোসেন বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘ছাত্রলীগ ট্যাগিং’ দিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। একটি জেলা ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কি কোনো শিক্ষার্থীকে ‘বাসে অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করতে পারে? এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”

বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে দাবি মানা না হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংদী জেলা ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের এক বিবৃতিতে দুই শিক্ষার্থীকে ছাত্রকল্যাণ সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় বাস পরিবহন ‘নোঙড়’ থেকে দুই শিক্ষার্থীকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নামে বহিষ্কার করা হয়। যা নিয়ে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ