পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় আজ শুক্রবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী বিক্ষোভ-মিছিল করেছে। বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ রাস্তায় নামায় রাজ্য ছিল উত্তপ্ত। তবে শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সংঘাত হয়নি। কিন্তু নানা পক্ষের মিছিলের কারণে কলকাতা শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাফেরায় সমস্যা হয়।

ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ওয়াক্‌ফ বিল পাস হওয়ার প্রতিবাদেও আজ কলকাতায় বিভিন্ন সংগঠন বড় বিক্ষোভ করেছে। এই বিল আইনে পরিণত হয়ে বাস্তবায়িত হলে ভারতের মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির বড় অংশ বেহাত হতে পারে।

এ ছাড়া আগামী রোববার রামনবমী উপলক্ষে আজ একদিকে বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী দলগুলো কিছু জায়গায় মিছিল করে, অন্যদিকে ২৬ হাজার স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে খারিজ করে দেওয়ার প্রতিবাদেও কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে।

ওয়াক্‌ফ বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ভারতের পার্লামেন্টে ওয়াক্‌ফ বিল পাস হওয়াকে কেন্দ্র করে কলকাতা শহরের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বড় ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। মধ্য কলকাতার ধর্মতলা এবং দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাসে বড় জমায়েত ও বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভে ওয়াক্‌ফ বিল-বিরোধী পোস্টার ও ব্যানার দেখা গেছে। তাঁরা ওয়াক্‌ফ বিল-বিরোধী নানা স্লোগান দিয়েছেন। ওয়াক্‌ফ বিল-বিরোধী বিক্ষোভে কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না।

রফিক আহমেদ নামে পার্ক সার্কাস অঞ্চলের এক ব্যবসায়ী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠদের যেমন দেবোত্তর সম্পত্তির ট্রাস্ট রয়েছে, তেমনই মুসলমানদের জন্য রয়েছে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ট্রাস্ট। এখন একটি ধর্মের ট্রাস্ট রইল এবং অন্য ধর্মের খারিজ হয়ে গেল, এটা কীভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব?

বিক্ষোভের কারণে কলকাতায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। ট্যাক্সিচালক শিবু সিং প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকাল ১০টা থেকে শহরে অবিশ্বাস্য ট্রাফিক জ্যাম ছিল। আজ বলতে গেলে আমরা গাড়ি চালাতেই পারিনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কারণ, শহরজুড়ে নানা বিষয় নিয়ে মিছিল দেখলাম। মুসলমান সমাজের মিছিলের পাশাপাশি প্রচুর গেরুয়া পতাকাও দেখেছি।’

বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ

উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা মিছিল শেষে বিজেপির সমর্থকদের ওপরে হামলা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বিজেপির এক সমর্থক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোচবিহার শহরে বিজেপির পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিজেপি বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এতে পাল্টা সংঘর্ষ হয়েছে।’

রাজ্যের রাজারহাট নিউ টাউন অঞ্চলে আজ তৃণমূল কংগ্রেসের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের বিধান নগর পৌরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত ও তাপস চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষের সমর্থকেরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন।

সব্যসাচী দত্ত গোষ্ঠীর এক নেতা হাজি ইসরারকে লক্ষ্য করে চারটি গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। ইসরার সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাপসের গোষ্ঠীর সদস্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। কারণ, তিনি সব্যসাচী দত্তের অনুগামী। উপনগরী রাজারহাট-নিউটাউন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ রয়েছে।

ওই অঞ্চলে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। আজ শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষাকর্মীর চাকরি যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শোনা গেছে। তবে এ বিষয়ে বড় ধরনের কোনো বিক্ষোভ হয়নি।

হাওড়া জেলার মিছিলে আদালতের অনুমতি

আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে হাওড়া জেলায় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, ধারণা করা হচ্ছিল, কলকাতা হাইকোর্ট সেখানে রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দেবেন না। কারণ, সেখানে নানান সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে সেখানে রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।

শর্ত অনুযায়ী, ধাতুর তৈরি অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন অঞ্জনী পুত্র সেনা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মিছিল করতে পারবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ধর্মীয় শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মিছিল করতে পারবে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সবার কাছে পরিচয়পত্র থাকতে হবে। কোনো মিছিলেই ৫০০ জনের বেশি মানুষ যোগ দিতে পারবেন না।

রামনবমীকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে নানা পতাকা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ছ ল কর কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে

ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মাত্র ১২৭ রানে অলআউট হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আরও কম, ১২৫ রানে। কিন্তু রোববার (০২ নভেম্বর) তারা চোখে চোখ রেখে লড়াই করল আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে আফগানদের করা ২১০ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করে হার মানে মাত্র ৯ রানে। দুই ইনিংসে রান হয়েছে মোট ৪১১টি। যা আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ।

আরো পড়ুন:

কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস

ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত

স্বাগতিকরা থেমে থেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ব্রিয়ান বেনেট, সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্ল ও তাশিনগা মুসেকিওয়ার ব্যাটে লড়াই করে শেষ বল পর্যন্ত। বেনেট ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪৭ রান। অধিনায়ক রাজা ৭টি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৫১ রান। বার্ল ১৫ বলে ৫ ছক্কায় খেলেন ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস। আর মুসেকিওয়া ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ২৮ রান।

বল হাতে আফগানিস্তানের আব্দুল্লাহ আহমদজাই ৪ ওভারে ৪২ রানে ৩টি উইকেট নেন। ফজল হক ফারুকি ৪ ওভারে ২৯ রানে ২টি ও ফরিদ আহমদ ৩ ওভারে ৩৮ রানে নেন ২টি উইকেট।

তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ১৫.৩ ওভারে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন। এই রানে গুরবাজ আউট হন ৪৮ বলে ৮টি চার ও ৫ ছক্কায় ৯২ রানের ইনিংস খেলে। মাত্র ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। ১৬৩ রানের মাথায় ইব্রাহিম আউট হন ৭টি চারে ৬০ রান করে। এরপর সেদিকুল্লাহ অটল ১৫ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলীয় সংগ্রহকে ২১০ পর্যন্ত নিয়ে যান।

বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্রাড ইভান্স ৪ ওভারে ৩৩ রানে ২টি উইকেট নেন। অপর উইকেটটি নেন রিচার্ড এনগ্রাভা।

৯২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন গুরবাজ। আর মোট ১৬৯ রান করে সিরিজ সেরা হন ইব্রাহিম জাদরান।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ