বিক্ষোভ-মিছিল ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ
Published: 4th, April 2025 GMT
পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় আজ শুক্রবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী বিক্ষোভ-মিছিল করেছে। বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ রাস্তায় নামায় রাজ্য ছিল উত্তপ্ত। তবে শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সংঘাত হয়নি। কিন্তু নানা পক্ষের মিছিলের কারণে কলকাতা শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাফেরায় সমস্যা হয়।
ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ওয়াক্ফ বিল পাস হওয়ার প্রতিবাদেও আজ কলকাতায় বিভিন্ন সংগঠন বড় বিক্ষোভ করেছে। এই বিল আইনে পরিণত হয়ে বাস্তবায়িত হলে ভারতের মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ওয়াক্ফ সম্পত্তির বড় অংশ বেহাত হতে পারে।
এ ছাড়া আগামী রোববার রামনবমী উপলক্ষে আজ একদিকে বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী দলগুলো কিছু জায়গায় মিছিল করে, অন্যদিকে ২৬ হাজার স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে খারিজ করে দেওয়ার প্রতিবাদেও কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে।
ওয়াক্ফ বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভভারতের পার্লামেন্টে ওয়াক্ফ বিল পাস হওয়াকে কেন্দ্র করে কলকাতা শহরের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বড় ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। মধ্য কলকাতার ধর্মতলা এবং দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাসে বড় জমায়েত ও বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভে ওয়াক্ফ বিল-বিরোধী পোস্টার ও ব্যানার দেখা গেছে। তাঁরা ওয়াক্ফ বিল-বিরোধী নানা স্লোগান দিয়েছেন। ওয়াক্ফ বিল-বিরোধী বিক্ষোভে কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না।
রফিক আহমেদ নামে পার্ক সার্কাস অঞ্চলের এক ব্যবসায়ী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠদের যেমন দেবোত্তর সম্পত্তির ট্রাস্ট রয়েছে, তেমনই মুসলমানদের জন্য রয়েছে ওয়াক্ফ সম্পত্তির ট্রাস্ট। এখন একটি ধর্মের ট্রাস্ট রইল এবং অন্য ধর্মের খারিজ হয়ে গেল, এটা কীভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব?
বিক্ষোভের কারণে কলকাতায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। ট্যাক্সিচালক শিবু সিং প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকাল ১০টা থেকে শহরে অবিশ্বাস্য ট্রাফিক জ্যাম ছিল। আজ বলতে গেলে আমরা গাড়ি চালাতেই পারিনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কারণ, শহরজুড়ে নানা বিষয় নিয়ে মিছিল দেখলাম। মুসলমান সমাজের মিছিলের পাশাপাশি প্রচুর গেরুয়া পতাকাও দেখেছি।’
বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষউত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা মিছিল শেষে বিজেপির সমর্থকদের ওপরে হামলা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বিজেপির এক সমর্থক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোচবিহার শহরে বিজেপির পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিজেপি বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এতে পাল্টা সংঘর্ষ হয়েছে।’
রাজ্যের রাজারহাট নিউ টাউন অঞ্চলে আজ তৃণমূল কংগ্রেসের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের বিধান নগর পৌরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত ও তাপস চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষের সমর্থকেরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন।
সব্যসাচী দত্ত গোষ্ঠীর এক নেতা হাজি ইসরারকে লক্ষ্য করে চারটি গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। ইসরার সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাপসের গোষ্ঠীর সদস্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। কারণ, তিনি সব্যসাচী দত্তের অনুগামী। উপনগরী রাজারহাট-নিউটাউন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
ওই অঞ্চলে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। আজ শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষাকর্মীর চাকরি যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শোনা গেছে। তবে এ বিষয়ে বড় ধরনের কোনো বিক্ষোভ হয়নি।
হাওড়া জেলার মিছিলে আদালতের অনুমতিআজ সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে হাওড়া জেলায় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, ধারণা করা হচ্ছিল, কলকাতা হাইকোর্ট সেখানে রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দেবেন না। কারণ, সেখানে নানান সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে সেখানে রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।
শর্ত অনুযায়ী, ধাতুর তৈরি অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন অঞ্জনী পুত্র সেনা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মিছিল করতে পারবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ধর্মীয় শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মিছিল করতে পারবে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সবার কাছে পরিচয়পত্র থাকতে হবে। কোনো মিছিলেই ৫০০ জনের বেশি মানুষ যোগ দিতে পারবেন না।
রামনবমীকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে নানা পতাকা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে এবার জামায়াতের বিক্ষোভ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয়নগর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে উপজেলার চান্দুরা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২টি আসনসহ দেশের মোট ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন সদর ও বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছিল। নতুন গেজেটে বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়ন—হরষপুর, চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়ন তিনটিকে আগের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মধ্যে রাখতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন বিজয়নগর উপজেলার চার বাসিন্দা।
আজকের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সভাপতি লুৎফর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রাষ্ট্রু সরকার, চান্দুরা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সোহাগ খন্দকার, চান্দুরা হেফাজতে ইসলামের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব সিদ্দিকী, চান্দুরা ইউনিয়ন যুব খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমদসহ আরও অনেকে। তারা আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে প্রায় ৯৬ হাজার ভোটার আছেন, যা উপজেলার মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। দুই লক্ষাধিক ভোটারবিশিষ্ট উপজেলা একক সংসদীয় আসনের উপযুক্ত হলেও বছরের পর বছর ধরে এটিকে একবার সদর, একবার সরাইল, আবার কখনো নাসিরনগরের সঙ্গে যুক্ত করে অবহেলার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে।
তিনটি ইউনিয়নকে আগের আসনে রাখার দাবিতে উপজেলার গোলাম মোস্তফা, এ কে এম গোলাম মুফতি ওসমানী, মো. জাহিদুজ্জামান চৌধুরী ও মো. বায়েজিদ মিয়া স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন গতকাল দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ১৭ ঘণ্টা আগেএর আগে গতকাল বিকেলে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এ সময় তাঁরা আধা ঘণ্টার মতো সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই স্থানে আজ বিকেলে একই দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করার কথা আছে।