বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় অঙ্কের সম্পূরক শুল্ক আরোপের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই সম্পৃক্ত হবেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এসেছেন। বর্তমানেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে বাংলাদেশ সরকারের। এখন প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি যুক্ত হবেন।
  
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই শুল্ক আরোপ বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, বিশেষজ্ঞ ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠক থেকেই এমন সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড.

খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীসহ বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন। 

খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপের বিষয়টি আকস্মিক কোনো বিষয় নয়। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমি যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলাম। তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও শুল্ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এসেছি। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই মুহূর্তেও আমরা নিবিড় আলোচনাতে আছি। সব কিছু কূটনীতি দিয়ে সমাধান হয় না। আমরা আগেই সব কিছু জনাতেও চাই না।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ বাড়িয়েছে। তাদের বাণিজ্য ঘাটতির কথা চিন্তা করে তারা এটা করেছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে সংযুক্ত হবেন। আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সঙ্গে সংযুক্ত আছি। এখানে সম্ভাবনা দেখছি। তাদের দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনারও চেষ্টা করা হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা জ্বালানি, ক্র্যাপ্স, তুলার মতো আরও যেসব পণ্য আমদানি করা বা আমাদের আমদানির প্রয়োজন হয়, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করা হবে। এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। পাশাপাশি ড. খলিলুর রহমানও যুক্ত থাকবেন। আমাদেরও লক্ষ্য থাকবে প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর। এতে করে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ব্যবসায়ীরাও ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহী হবেন যদি তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, তাহলে আমরাও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের পণ্যের ওপর শুল্ক কম থাকলেও আমাদের পণ্য তাদের থেকে বেশি উপযুক্ত। আমরা এ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা যেসব প্রস্তাব করেছেন, সেগুলো আমরা কনসাইজ করে উপস্থাপন করব। 

ইতোমধ্যে ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ শুল্ক কমানোর বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে। বাংলাদেশ এ ধরনের কোনো আবেদন করবে কিনা জানতে চাইলে বশির উদ্দিন বলেন, আগামী ৯ তারিখ থেকে শুল্ক কার্যকর হবার কথা। কাজেই আবেদন করার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে যারা ছিলেন

বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন আহমেদ, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিশেষজ্ঞরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প শ ল ক আর প ক ত হব ন সরক র র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ