রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দল মূল ভূমিকায় থাকে। রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলের সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার টেকসই, অর্থবহ এবং কল্যাণকর হবে না। স্বৈরাচার পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা মেনে চলার ওয়াদা থাকলেও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল এবং জোট ক্ষমতায় বসেছে। প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে জাতির সঙ্গে প্রকারান্তরে প্রতারণা করেছে তারা।
 রাজনৈতিক দল আর দেশের স্বার্থ সমান্তরালে চললে কোনো অসুবিধা হয় না। রাজনৈতিক দলের নীতি ও কাজ দেশের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তখন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গ যাতে দেশের স্বার্থ দেখে, সে দলে টিকে থাকতে পারে সে রকম একটা মেকানিজম প্রয়োজন। ১/১১ এর আমলে সংস্কার একটা অশ্লীল শব্দে পরিণত হয়েছিল। কালের পরিক্রমায় আজকে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বাহ্যিকভাবে হলেও কেউই অস্বীকার করতে পারছে না। 

কোনো কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে নতুন করে গড়ে তোলাটাও সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। আবার যে কাঠামো বিদ্যমান ব্যবস্থাতে নেই, সেই কাঠামো নতুন করে প্রতিষ্ঠা করাটাও কিন্তু সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। সংস্কারের অপব্যাখা দিচ্ছে অনেকে। সংস্কার মানে শুধু বিদ্যমান কাঠামোর পরিবর্তন বা বিদ্যমান কাঠামোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির পরিবর্তনই কেবল নয়, এটি অনুধাবন করতে পারাটা জরুরি। এমন কতগুলো বিষয় আছে, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলের দায় আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। রাজনৈতিক দল সম্পর্কে স্পষ্ট আইন প্রণয়ন করা জরুরি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যক্তির অর্থ খরচের সীমানা নির্ধারিত। তবে রাজনৈতিক দল এ সময়ে দাঁড়িয়ে কোন খাতে কতটা ব্যয় করতে পারবে, বাস্তবিক প্রেক্ষাপট আমলে নিয়ে তার একটা আইনগত কাঠামো চাই। জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল সম্পর্কে আইন হওয়াটা জরুরি। অতীতে এরশাদের আমলে জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তা রক্ষিত হয়নি।  

রাজনৈতিক দল সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর হর্তাকর্তাদের দেওয়া উচিত। জনগণ দেখতে চায়, তারা নিজ দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল সংস্কারে কী রকম প্রস্তাবনা নিয়ে হাজির হয় মানুষের সামনে। এ জাতির খুব কমই সৌভাগ্য হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে খোলা মনে আলাপ করতে দেখার। সময়ের আবর্তে এই কমিশনের প্রয়োজনীয়তা যেমন অনুভূত হচ্ছে, ঠিক একইভাবে এ কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বৈঠকে বসার একটা চর্চার মধ্যে অন্তত আসবে। 
ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে, দেশ সংকটে পতিত হলে জাতীয় রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের তাগাদা কি শাসনের গুরুদায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক দল অথবা দলের সমন্বয়ে রাজনৈতিক জোট অনুভব করবে– এর নিশ্চয়তা কে দেবে? রাজনৈতিক দলগুলো যেন ভুলে না যায় হাসিনা দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে হাসিনার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরোধিতাকারীদের ওপর কেমন অত্যাচার চালিয়েছে। যদি মুখ্য শক্তি এবং গৌণ শক্তি নিরূপণের প্রশ্ন আসে তখন, জনগণ মুখ্য রাজনৈতিক শক্তি, আর রাজনৈতিক দল হচ্ছে গৌণ শক্তি। 
সংবিধান পুনর্লিখন অবশ্যই জরুরি। সংবিধানে আছে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগ সহায়তা করবে। সহায়তা না করলে কী হবে, সে বিষয়ে না আছে সংবিধানে কিছু, না আছে অন্য কোথাও কোনো শাস্তির বিধান। 

দেশের স্বার্থরক্ষা না করার পেছনে অতীতে ক্ষমতায় থাকা অনেক রাজনৈতিক দলের ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক দল ও জোট সম্মিলিতভাবে দায়ী। এ দায়বদ্ধতার কোনো বিচারের সুযোগ দেশের বিদ্যমান আইন কাঠামোতে নেই। এ ক্ষেত্রে সংস্কার নয়, বরং নতুন কাঠামোগত ভিত্তি দরকার। সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম, শিক্ষাসহ সব জায়গা সংস্কার হলেও রাজনৈতিক দল প্রকৃতপক্ষে সংস্কার না হলে দীর্ঘ মেয়াদে অকার্যকর হতে বাধ্য সবকিছু। কারণ, এসব কিছুর ওপর একক বা সম্মিলিত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে নিয়ন্ত্রণ দিনশেষে দলগুলোর কাছে যাবে। যাওয়াও উচিত। সেই নিয়ন্ত্রণে লাগাম টানার রশিও জনগণের হাতে থাকা উচিত। একটা নিয়ন্ত্রণ অবশ্য আছে। সেটি হচ্ছে, পাঁচ বছর পর ভোট দিয়ে নিয়ন্ত্রণটা এক পক্ষ থেকে নিয়ে অন্য পক্ষের হাতে দিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই পাঁচ বছর সময়কালে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, তা জাতি যুগের পর যুগ টের পেয়েছে অতীতে। সরকারের মেয়াদ কমিয়ে তিন বা চার বছর করাটা যেমন দরকার, একইভাবে ত্বরিত গতিতে যেন নিয়ন্ত্রণের বেপরোয়া বা লাগামহীন অপব্যবহার বন্ধে মানুষ যেন লাগাম টেনে ধরতে পারে, সে ব্যবস্থাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাডভোকেট জায়েদ বিন নাসের: সভাপতি, 
বাংলাদেশ ল অ্যালায়েন্স

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য় র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এটিএম কামালের দোয়া মাহফিলে মাসুদুজ্জামান   

বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দ্রুত রোগমুক্তি কামনায় আজ নারায়ণগঞ্জে গভীর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক মাসুদুজ্জামান। তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা এবং দেশের কল্যাণের জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।

দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, তাঁর সুস্থতা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল।

দোয়ার আয়োজনে মাসুদুজ্জামান বলেন, “আমাদের জাতীয় নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ আজ অসুস্থ। তাঁর দ্রুত আরোগ্যই শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্য নয় - বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য অপরিহার্য। জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করি। 

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। সুস্থতা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক আশা এবং আমরা তাঁর আরোগ্যের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করছি।

তিনি অতীতে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল, গণতান্ত্রিক চর্চা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার নানা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন- এই কারণে তাঁর সুস্থতা অনেক মানুষের কাছে মানসিকভাবে এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।”

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আব্দুস সবুর খান সেন্টু, আনোয়ার হোসেন আনু, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য মনোয়ার হোসেন শোখন, সাবেক চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আতাউর রহমান মুকুলসহ মহানগরের অন্যন্য বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দরা।

এছাড়াও দোয়ার আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, মহিলদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।

অনুষ্ঠান শেষে নেতাকর্মী ও উপস্থিত সকল মানুষ দোয়া মাহফিলের মূল উদ্দেশ্যের প্রতি গভীর সংমত প্রকাশ করেন।

তাঁরা বলেন, দেশের একজন বরেণ্য জাতীয় ব্যক্তিত্ব কঠিন অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন - এ সময়ে দল-মত নির্বিশেষে সবাই তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছে। বক্তারা উল্লেখ করেন যে মানবিক মূল্যবোধই সবচেয়ে বড় পরিচয়, এবং অসুস্থতার মতো পরিস্থিতি মানুষের মাঝে সহমর্মিতা ও ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করে।

শেষে সবাই আশা প্রকাশ করেন, দেশনেত্রীর সুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে জাতির মধ্যেও শান্তি, সহমর্মিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আরও সুদৃঢ় হবে।

তাঁরা আগত দিনগুলোতে একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, যা সমাজে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এটিএম কামালের দোয়া মাহফিলে মাসুদুজ্জামান   
  • ভোটের মাঠে জোটের ভিড়ে জনপ্রত্যাশা কোথায় গেল 
  • পার্বত্য ৩ আসনে প্রার্থী না দিতে জাতীয় দলগুলোর প্রতি আহ্বান ইউপিড
  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান ইসলামী ফ্রন্টের
  • তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • ‘নির্বাচন সহজ হবে না, পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে’
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর