মৃত মুরগি নিয়ে থানায় বৃদ্ধা, চাইলেন বিচার
Published: 6th, April 2025 GMT
লালমনিরহাট সদরের তিস্তা পাড়ের বৃদ্ধা রশিদা বেগম। নিজের বলতে কিছু নেই তার। অন্যের ভিটেতে বাস করেন তিনি। সম্বল বলতে ১০টি মুরগির বাচ্চা ও একটি মা মুরগি। অন্যের বাড়িতে কাজ ও ভিক্ষা করে একটি মুরগি কিনেছিলেন। সেখান থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে ১০টি মুরগি হয়। শুক্রবার বিকেলে মুরগিগুলো মারা যায়। রশিদার দাবি, বিষ প্রয়োগ করে মুরগিগুলো হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে মৃত পাঁচটি মুরগি নিয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় হাজির হন রাশিদা। থানার প্রবেশদ্বারে মৃত মুরগি রেখে কান্না ও বিলাপ শুরু করেন তিনি।
কোলে মৃত মা মুরগিকে নিয়ে রাশিদা বলেন, ‘কত আদর করছি তোমাক গুলাক (মুরগিগুলো), নিজের ছাওয়ার (ছেলে-মেয়ে) মতো তোমার গুলাক আদর করছি, তোমরা গুলা (মুরগিগুলো) হামাক ছাড়ি গেলেন। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে থানায় আসছি।’
তার দাবি, পার্শ্ববর্তী ভুট্টা ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করায় মুরগিগুলো মারা গেছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। রশিদা গোকুন্ডা ইউনিয়নের বেড়া পাঙ্গা গ্রামের মৃত মজিবার রহমানের স্ত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিন-চার দিন আগে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ঢাকনাই কুড়ার পাড় এলাকায় ছোট ভাই ছালামের মেয়ের বিয়েতে যান রাশিদা। প্রতিদিনের মতো বিকেলে মুরগিগুলো ঘরে উঠিয়ে রশিদা ভাইয়ের বাড়িতে চলে যান। শুক্রবার বাড়িতে এসে একটি বড় মুরগি ও ১০টি মুরগির বাচ্চা মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তার দাবি, মুরগিগুলো বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে।
রাশিদা সমকালকে জানান, বাড়িতে তিনি একা থাকেন। এ ভিটা তার নয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও সাহায্য নিয়ে তাকে চলতে হয়। ছেলে রাজ্জাক আলী বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। মেয়ে মুক্তার বিয়ে হয়ে গেছে। শেষ সম্বল মুরগিগুলো মারা যাওয়ায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন। তাই বিচার চাইতে মৃত মুরগিগুলো নিয়ে থানায় এসেছেন।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরনবী জানান, মুরগিগুলোই বৃদ্ধা রশিদার বড় সম্পদ। তদন্ত করা হচ্ছে। কেউ দায়ী হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রগ গ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।