খাবার খেয়ে অসুস্থ অনেকে বিপদে গার্মেন্ট কর্মীরা
Published: 6th, April 2025 GMT
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের গাজী খাঁ দক্ষিণ সোনারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গতকাল রোববার ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে অনেক গার্মেন্ট কর্মী কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে বিপদে রয়েছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় গাজী খাঁ দক্ষিণ সোনারপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার বাড়িতে ছেলের আকিকার আয়োজন করা হয়। খাবার খেয়ে বিকেল থেকে অনেকের জ্বর, বমি, পেটব্যথা ও ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। শুরুতে সবাই বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও শনিবার থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অসুস্থদের মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গার্মেন্টে চাকরি করেন। তারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। সপ্তাহের শুরুতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু অসুস্থতার
কারণে অনেকে ফিরতে পারেননি। ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন তারা।
খাবার খেয়ে আসার পর রাত থেকে পাতলা পায়খানাসহ জ্বরে আক্রান্ত হন আজিজুল হক। তাঁর পরিবারের অন্যদেরও একই অবস্থা। শাফিউল ইসলামেরও একই উপসর্গ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করি। আজ (রোববার) থেকে আমার অফিস খোলা হলেও অসুস্থতার জন্য যেতে পারিনি। জানি না চাকরি থাকবে কিনা।’
সপরিবারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন বাবুনপুর গ্রামের এনামুল হক। তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম এবং দুই মেয়ে আদিবা ও আতিকাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামী-স্ত্রী দু’জন গাজীপুরে গার্মেন্টে চাকরি করেন। ছুটি শেষ হলেও তারা ফিরতে পারছেন না।
খাবারের আয়োজন করা লিটন মিয়া বলেন, ‘আমরা খুব যত্নসহকারে খাবারের আয়োজন করেছিলাম। তারপরও কীভাবে কী হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা নিজেরাও অসুস্থ। এটি ষড়যন্ত্রও হতে পারে। নয়তো এমন হওয়ার কথা নয়।’
চলতি মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি– জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম মণ্ডল রিমন বলেন, শুক্রবার থেকে হঠাৎ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ হওয়া পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। খাবারে এমন উপাদান থাকতে পারে, যা থেকে এ সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, অতিরিক্ত গরমে গরুর মাংসে সমস্যা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। শ্রমিকদের যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য যোগাযোগ করছে পুলিশ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে সমন্বয় করে ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স
এছাড়াও পড়ুন:
জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।
ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।
তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।
সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।
গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।
বয়স ও বংশগতির প্রভাব।
ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।
নির্ণয় ও চিকিৎসা
আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।
টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি
ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ