২৫ বছর আগের ক্রিকেট–কাঁপানো সেই কেলেঙ্কারি
Published: 7th, April 2025 GMT
অন্য অনেকের মতো হান্সি ক্রনিয়েরও ঘৃণিত হওয়ার কথা ছিল। ম্যাচ গড়াপেটা, পাতানো—এসবের সঙ্গে কোনো ক্রিকেটার জড়িত হলে তাঁকে কে পছন্দ করবে? ক্রনিয়ে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু কেন জানি তিনি ঘৃণিত নন। অশ্রদ্ধা? বুকে হাত দিয়ে এটাও খুব বেশি ক্রিকেট সমর্থক বলতে পারবে না।
অথচ ক্রনিয়ে নিজে স্বীকার করেছিলেন, জুয়াড়িদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন তিনি। সরাসরি ম্যাচ পাতাননি, কিন্তু ম্যাচ-পূর্ববর্তী খবরাখবর ফাঁস করেছিলেন। অর্থের লোভে সতীর্থদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন খারাপ খেলার জন্য! এত কিছুর পরও ক্রনিয়ের জন্য একটা দুর্বল জায়গা আছে ক্রিকেট সমর্থকদের মনে। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের মনে তো অবশ্যই। নইলে কি আর ‘সর্বকালের সেরা ১১ দক্ষিণ আফ্রিকান’-এর একজন হিসেবে তাঁকে বেছে নেয় তারা! তা-ও আবার তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর দুই বছর পর!
২৫ বছর আগে ঠিক এই দিনে, মানে ৭ এপ্রিল, দিল্লি পুলিশ দাবি করল, ভারতীয় এক জুয়াড়ির পাল্লায় পড়ে ম্যাচ পাতানোয় ভূমিকা রেখেছিলেন ক্রনিয়ে। এর আগপর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ছিলেন ‘ক্রিকেট–বিশ্বের ভদ্রলোক’। যান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে যেন প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন তিনি। দেখিয়েছিলেন অধিনায়কত্ব কতটা দারুণ, কতটা আধুনিক হতে পারে। কিন্তু ওই যে পাতানো ম্যাচের অভিযোগ আর তাতে স্বীকারোক্তি, সে কারণে ২০০০ সালের অক্টোবরে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয় ক্রনিয়েকে।
২০০০ সালের ৭ এপ্রিল। দিল্লি পুলিশের এক বিস্ফোরক অভিযোগ নাড়িয়ে দেয় ক্রিকেট–বিশ্বকে। তারা দাবি করে, দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হান্সি ক্রনিয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এক জুয়াড়ির সঙ্গে ফিক্সিং নিয়ে তাঁর কথোপকথনের টেপ আছে তাদের কাছে। অভিযোগটা ছিল এমন একজনের বিরুদ্ধে, যা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন। শুরুতে অনেকেই বিশ্বাস করেওনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় সেই অভিযোগের। তখনো ক্রনিয়ের পক্ষেই বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমী। ক্রনিয়ে নিজেও অভিযোগ অস্বীকার করেন। সংবাদ সম্মেলন করে তখনকার ইউনাইটেড ক্রিকেট বোর্ড অব সাউথ আফ্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ব্যাখার তাঁর দলের অধিনায়কের ওপর পুরো আস্থা আছে বলে জানিয়ে দেন।
কিং কমিশনের সামনে শুনানিতে ক্রনিয়ে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।
ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’
মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।
ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।
তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।
মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।
আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।
আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদআনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।
সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।