আন্তঃপ্রজন্ম স্বনির্ভর ক্লাব, যা ইংরেজিতে ইন্টারজেনারেশনাল ইনডিপেনডেন্ট ক্লাব। প্রজন্মগত গ্যাপ পূরণে কাজ করে এ ক্লাব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সংগঠন বহুবিধ কাজ করে। ভিয়েতনামে ২০০৬ সালে এই মডেলের প্রবর্তন হয় নারী সমাজকর্মী ট্রান বিচ থুরের নেতৃত্বে। এই মডেল প্রবীণদের ব্যস্ত রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস, বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিজেদের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ। মানুষ সব সময় কাজের মাঝে থাকলে তাদের একাকিত্ব ঘুচে যায়, আত্মসম্মানবোধ বাড়ে। তারা একে অপরকে সাহস বা অনুপ্রেরণা দিয়ে মন প্রফুল্ল রাখে।
নবীন-প্রবীণের মিশ্রণে সাম্প্রদায়িক সংহতি, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সামাজিক একাত্মতার বন্ধন তৈরি হয়। মানুষের জীবনে মৌলিক চাহিদা পাঁচটি– অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা। এই পাঁচটিকে উন্নত থেকে উন্নততর করার জন্য দরকার সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশন বা একজন মানুষের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য সূচক প্রতিভাকে বিকশিত করার অনুঘটক হিসেবে সহায়তা, যা সংঘটিত করতে পারেন প্রবীণরাই নবীনদের সঙ্গে নিয়ে। অর্থাৎ প্রবীণরা নবীনদের গাইড হিসেবে কাজ করেন। 

এই ক্লাবের মেম্বারদের কিছু গুণ থাকতে হয়। যেমন নিজের কাজ করার পাশাপাশি অন্যকে সাহায্য করার প্রবণতা; কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা; স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার আবেগ; নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সদস্য হওয়া; ৭০ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি; অর্ধেক সদস্য হবে নারী এবং যারা আর্থসামাজিকভাবে দুর্বল তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে নানা উপায়ে।   
প্রবীণরা যদি অবসরের পর ঘরে বসে থাকেন তাহলে তাদের শারীরিক অনেক অসুবিধা হয়। শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়; হৃদরোগ দেখা দেয়; ডায়াবেটিস হয়; মাংসপেশি, হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি লোপ পায় ইত্যাদি। তা ছাড়া ডিপ্রেশন বা হতাশা, বিষণ্নতা, নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবা, একাকিত্ব, আত্মসম্মান লোপ পাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। তাদের নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হয়।
প্রবীণরা সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে দূরে সরে যান। কর্মজীবনের পরিচয় থেকে  হারিয়ে যান। স্বাভাবিক কারণেই তারা আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। প্রিয়জন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এবং যে কোনো অপরিচিত স্থানে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়।  

সুতরাং ভিয়েতনামে উন্নয়নের লক্ষ্যে এই ‘আন্তঃপ্রজন্ম স্বনির্ভর ক্লাব’ মডেল ২০০৬ থেকে ’২০ সাল; এই ১৪ বছরে দুই হাজারে পৌঁছে যায়। কভিড-১৯ অতিমারিকালে এই ক্লাবগুলো সরকারের পাশাপাশি সারাদেশে মাস্ক, লিকুইড সাবান, হোমকেয়ার ভিজিট, তহবিল সংগ্রহকরণ, টেলিমেডিসিন, ফোনকল, লাউড স্পিকারে জনগণকে সতর্কীকরণ, চেকপোস্ট বসিয়ে কভিড-১৯ শনাক্তকরণ ইত্যাদি কাজ করেছে। ইতোমধ্যে ২০২২ সালে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা কুড়িয়েছে, যা আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মাধ্যমে তারা জাপান ও কোরীয় সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ অনুদান পেয়েছে।

এই উপমহাদেশে প্রবীণদের আমরা বোঝা ভেবে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসি। কিন্তু আমাদের পরে স্বাধীনতা লাভ করে ভিয়েতনাম তাদের কাজে লাগিয়ে সমাজ ও দেশের উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করেছে, যা পৃথিবীতে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।
বাংলাদেশে সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা ২০৩০ সালে ২ কোটি ১৫ লাখ এবং ২০৫০ সালে ৩ কোটি ৬০ লাখ হবে। সুতরাং অনতিবিলম্বে আমাদেরও এই জনশক্তিকে নবীনদের সঙ্গে নিয়ে শানিত করতে হবে দেশ গড়ার হাতিয়ারে রূপান্তরের জন্য। প্রবীণরা সমাজের বোঝা নন; তারা পরিগণিত হবেন দেশের সম্পদে।  

ডা.

গোলাম শওকত হোসেন: চিকিৎসক ও শিক্ষক
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রজন ম ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন: মিন্টু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, “নির্বাচনে ফেনীর ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন। নির্বাচন নিয়ে ফেনীতে কোনো চিন্তা নেই।”

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। 

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই যে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। তবে, দেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় তার আগেও নির্বাচন হয়ে যেতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে একটি মামলা চলমান আছে। যদি কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রবর্তন হয়, তাহলে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেয়ারটেকার হবে না। কেয়ারটেকার সরকারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা আছে।”

আরো পড়ুন:

প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে আমরা কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা

সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে ভালো কাজ করবে না, উল্লেখ করে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “বিগত ১৯ বছর আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। কেউ যদি বলে, আমরা হঠাৎ করে নির্বাচন চাচ্ছি, বিষয়টি সঠিক নয়। বরং, ২০০৬ সাল থেকে আমরা নির্বাচন চেয়ে আসছি। একটি দেশের সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে, তাহলে তারা কখনো ভালো কাজ করবে না। তাই, আমরা চাচ্ছি নির্বাচন হোক।”

বিএনপির এ সিনিয়র নেতা আরো বলেন, “আমরা বলে আসছি, ২০০৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে, সেটি অবাধ ও সুষ্ঠ হয়নি। ২০০৬ সাল থেকে দেশে কোনো নির্বাচনকালীন সরকার নেই। দুই যুগ ধরে যদি নির্বাচিত সরকার না থাকে, তাহলে মানুষের অর্থনৈতিক বা জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে না। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত থাকে একটি সরকার, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন: মিন্টু