যে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়
Published: 8th, April 2025 GMT
যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ সামনে এলে বলা হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। বিশ্বাসীরা কেবল মুখে বলা নয়; বরং মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেওয়া যে আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব—এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল এ দুনিয়ায় থাকা যাবে না। একদিন আল্লাহরই কাছে যেতে হবেই।
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ অর্থ সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অর্থ (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে আমরা তো আল্লাহরই আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব। কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে পড়েন। অনেকে মনে করেন, মানুষের মৃত্যুসংবাদ পেলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তে হয়। বরং ইন্না লিল্লাহ পড়ার অনেক কারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। এই পবিত্র বাক্য আল্লাহকে স্মরণ রাখার বড় উপায়।
আরও পড়ুন যেকোনো সময় এই দোয়া করা যায়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে (কাউকে) ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, আর (কাউকে) ধনে–প্রাণে বা ফল–ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের তুমি সুখবর দাও। (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, [ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন] ‘আমরা তো আল্লাহর আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব।’ এসব লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আশীর্বাদ ও দয়া বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎ পথপ্রাপ্ত। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭) এ তিনটি আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট। কারা ইন্না লিল্লাহ পড়বেন, কোনো পরিস্থিতিতে পড়বেন এবং পড়লে কী উপকার।
বিশ্বাসীরা বিপদে পড়লে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেন। কেউ বিপদে পড়লে যেন এ দোয়াটি পাঠ করে। একাধারে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি অর্থের প্রতি লক্ষ রেখে পাঠ করা হয়, তবে বিপদের মধ্যেও শান্তি লাভ করবে বিপদ থেকে উত্তরণও সহজ হয়ে যায়।
কোনো বিপদে বান্দার মুখে উচ্চারিত হয় এই দুটি বাক্য—এর অর্থ আল্লাহর ফয়সালা সর্বান্তঃকরণে মেনে নিচ্ছি। আর আখিরাতে বিশ্বাস করি, তাই এ বিপদে সবরের বিনিময় তাঁর কাছে প্রত্যাশা করছি। দুটি বাক্যে ইমানের মৌলিক সাক্ষ্য দেওয়া হয়। তাই এর ফজিলতও অনেক।
আরও পড়ুনতওবা করলে আল্লাহ খুশি হন ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩বিপদের সময় বলতে হবে উম্মে সালামা (রা.
তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)–কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিমের ওপর বিপদ এলে যদি সে বলে, আল্লাহ যা হুকুম করেছেন—ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (অর্থাৎ আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তারই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এই দোয়া পড়ে, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরাম মিনহা ইল্লা আখলাফাল্ল হুলাহ খয়রাম মিনহা (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে আমার মুসিবতে সওয়াব দান করো এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করো, তবে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন।) উম্মে সালামা (রা.) আরও বলেন, আবু সালামা যখন ইন্তেকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, আবু সালামা থেকে উত্তম মুসলিম আর পাব না। এরপর আমি দোয়া পড়লাম। এরপর মহান আল্লাহ আবু সালামার স্থলে রাসুল (সা.)–এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমার কাছে রাসুল (সা.) বিয়ের পয়গাম দেওয়ার জন্য হাতিব ইবনে আবু বালতা (রা.)–কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা মেয়ে আছে আর আমার জিদ বেশি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তার মেয়ে সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব, যাতে তিনি তাকে তার মেয়ের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দোয়া করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (মুসলিম, হাদিস: ৯১৮)
আরও পড়ুনপরিবারের জন্য অভিভাবক দোয়া করবেন০৭ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে ফারইস্টকে বিদায় করে এআইইউবিকে ফাইনালে তুললেন রাজীব
ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)।
জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ প্রথম সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের গত আসরের রানার্সআপ এআইইউবি জিতেছে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের রানার্সআপ ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিপক্ষে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে ম্যাচটি ছিল ২-২ সমতায়। এরপর টাইব্রেকারে এআইইউবি জেতে ৬-৫ গোলে।
টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেয়েছে এআইইউবি। নির্ধারিত সময়ে দুবার পিছিয়ে ম্যাচে ফিরেছে তারা, টাইব্রেকারেও একপর্যায়ে পিছিয়ে ছিল দলটি। টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে এআইইউবিকে ফাইনালে তুলে নেন গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলা গোলকিপার রাজীব ইসলাম।
জাতীয় স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচজুড়েই ছিল টান টান উত্তেজনা। টাইব্রেকারে প্রথম চারটি শটে দুই দলই গোল করে। এআইইউবির আজিজুল হক অনন্তর নেওয়া পঞ্চম শট পোস্টে লাগে। এরপর এআইইউবির গোলকিপার রাজীব প্রতিপক্ষ গোলকিপার আরমান হোসেনের শট আটকে দলকে ম্যাচে রাখেন। তখন স্কোর দাঁড়ায় ৪-৪।
এরপর সাডেন ডেথের প্রথম শটে দুই দলই গোল করে, ৫-৫। কিন্তু সাডেন ডেথে ষষ্ঠ শটে এআইইউবি গোল করলেও ফারইস্টের সালমান গোল করতে পারেননি। তাঁর শট আটকে দেন এআইইউবির গোলকিপার রাজীব। আরমান ও সালমান দুই ভাই।
দুজনই টাইব্রেকারে শট মিস করেন। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে জেতে এআইইউবি।
ফারইস্টের দুর্ভাগ্য, দুবার এগিয়ে গিয়েও এবং টাইব্রেকারে লিড নিয়েও তারা জিততে পারেনি। পারেনি এআইইউবির গোলকিপার রাজীব ইসলামের দৃঢ়তায়। জয়ের পর গোলকিপার রাজীবকে নিয়ে এআইইউবি মেতে ওঠে উল্লাসে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন এআইইউবির জয়ের নায়ক রাজীব।
মূল ম্যাচে এআইইউবির প্রাধান্য ছিল। তবে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে তারা জিততে পারেনি। ৩০ মিনিটে গোল করে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামা ফারইস্টকে এগিয়ে দেন ব্রাদার্সের ফরোয়ার্ড মেরাজ প্রধান।
বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেন তিনি। ৪৪ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন এআইইউবির আরিফুল হক। ৫৪ মিনিটে আবার গোল করে ফারইস্টকে এগিয়ে নেন মেরাজ। তবে দ্রুতই সেই গোল শোধ হয়ে যায়। ৫৯ মিনিটে গোলাম রাব্বি গোল করে ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরান। এরপর ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে, যেখানে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে এআইইউবি।
ফারইস্ট আজ তাদের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়কে পায়নি। বাংলাদেশ লিগে খেলা থাকায় খেলতে পারেননি আবাহনীর ফরোয়ার্ড আসাদুল মোল্লা, একই দলের গোলকিপার পাপ্পু হোসেন, পুলিশের মিডফিল্ডার এমএস বাবলু, ফকিরেরপুলের ফরোয়ার্ড স্বাধীন হোসেন, প্রথম বিভাগের ডিফেন্ডার লিহান উদ্দিন এবং অধিনায়ক আল আমিন ও সেনাবাহিনীর গোলকিপার আশরাফুল।
ফারইস্ট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুধু মেরাজকে। সেই মেরাজ দুই গোল করেও দলকে জেতাতে পারেননি।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের আরামবাগের মিডফিল্ডার ওমর ফারুক মিঠু ও আক্কাস আলী, মোহামেডানের স্ট্রাইকার সৌরভ দেওয়ান, ডিফেন্ডার আজিজুল হক ও জাহিদ হাসানকে পেয়েছে এআইইউবি। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারেননি রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার আলফাজ মিয়া।
ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান ও জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. মঞ্জুর ই খোদা তরফদার, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের বিপণন মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাহিদ হাসান এমিলি ও মামুনুল ইসলাম।
গত বছর ফাইনালে এআইইউবি হেরে যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছে। এবার তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ হবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল। ম্যাচটি আজই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।