গণহত্যা, সন্ত্রাস ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের বিচারে একমত হয়েছে  জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও হেফাজতে ইসলাম। বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল করে দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা, দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতেও একমত হয়েছে এনসিপি-হেফাজত।

বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
 
গত ৫ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছিল নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজত। তখন বিএনপির তরফে জানানো হয়েছিল, দ্রুত নির্বাচনের জন্য হেফাজত একমত হয়েছে। 

যদিও পরবর্তীতে হেফাজতের তরফে জানানো হয়, কখনও নির্বাচনে যুক্ত হবে না সংগঠনটি। আওয়ামী লীগের বিচার, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে। 
বিএনপির কয়েকজন নেতা ইসলামপন্থিদের যেভাবে ঢালাও উগ্রবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন, এ নিয়ে অসন্তোষ জানানো হয়েছে।

আজকের বৈঠকের বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, হেফাজতের আগ্রহে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। হেফাজত চায় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার হোক। এ দাবিতে ঐকমত্য সৃষ্টি করতেই বৈঠক। 

এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যোগ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এনসিপি বহুত্ববাদকে সমর্থন করেছে। কিন্তু বহুত্ববাদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। হেফাজত চায় ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মূলনীতি হিসেবে ফিরুক। এনসিপি জানিয়েছে তারা মতামত পুনর্বিবেচনা করবে।
 
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা জামায়াতে ইসলামীর সমালোচক। বিএনপি ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করলেও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হবে কি-না প্রশ্নে, মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সবার সঙ্গেই পর্যায়ক্রমে কথা হবে। ১২ এপ্রিল সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। 

আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১৩ ও ২০২১ সালে হেফাজতের কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একমত হয়েছে এনসিপি। নবগঠিত দলপির কেন্দ্রীয় সংগঠক রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের দ্রুত বিচার করা এবং হেফাজতের নানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে  সবাই একমত হয়েছেন।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন। 

এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কি-না, প্রশ্নে মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, সংগঠনের মহাসচিব আগেই স্পষ্ট করেছেন ভোটের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক নেই। তবে হেফাজতের অনেকে রাজনীতি করেন, তাই নির্বাচনের কিছু কথা এসে যায়। কিন্তু নির্বাচন কবে হবে- এ নিয়ে হেফাজতের কোনো দাবি-দাওয়া নেই। 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির ড.

আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
 
এনসিপির পক্ষে ছিলেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহদী প্রমুখ। 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ব এনপ র এনস প র র জন ত স গঠন ইসল ম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক