ভোটের আগে আ’লীগের বিচারে একমত এনসিপি-হেফাজত
Published: 9th, April 2025 GMT
গণহত্যা, সন্ত্রাস ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের বিচারে একমত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও হেফাজতে ইসলাম। বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল করে দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা, দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতেও একমত হয়েছে এনসিপি-হেফাজত।
বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
গত ৫ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছিল নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজত। তখন বিএনপির তরফে জানানো হয়েছিল, দ্রুত নির্বাচনের জন্য হেফাজত একমত হয়েছে।
যদিও পরবর্তীতে হেফাজতের তরফে জানানো হয়, কখনও নির্বাচনে যুক্ত হবে না সংগঠনটি। আওয়ামী লীগের বিচার, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা ইসলামপন্থিদের যেভাবে ঢালাও উগ্রবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন, এ নিয়ে অসন্তোষ জানানো হয়েছে।
আজকের বৈঠকের বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, হেফাজতের আগ্রহে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। হেফাজত চায় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার হোক। এ দাবিতে ঐকমত্য সৃষ্টি করতেই বৈঠক।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যোগ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এনসিপি বহুত্ববাদকে সমর্থন করেছে। কিন্তু বহুত্ববাদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। হেফাজত চায় ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মূলনীতি হিসেবে ফিরুক। এনসিপি জানিয়েছে তারা মতামত পুনর্বিবেচনা করবে।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা জামায়াতে ইসলামীর সমালোচক। বিএনপি ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করলেও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হবে কি-না প্রশ্নে, মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সবার সঙ্গেই পর্যায়ক্রমে কথা হবে। ১২ এপ্রিল সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১৩ ও ২০২১ সালে হেফাজতের কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একমত হয়েছে এনসিপি। নবগঠিত দলপির কেন্দ্রীয় সংগঠক রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের দ্রুত বিচার করা এবং হেফাজতের নানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে সবাই একমত হয়েছেন।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কি-না, প্রশ্নে মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, সংগঠনের মহাসচিব আগেই স্পষ্ট করেছেন ভোটের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক নেই। তবে হেফাজতের অনেকে রাজনীতি করেন, তাই নির্বাচনের কিছু কথা এসে যায়। কিন্তু নির্বাচন কবে হবে- এ নিয়ে হেফাজতের কোনো দাবি-দাওয়া নেই।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির ড.
এনসিপির পক্ষে ছিলেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহদী প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ব এনপ র এনস প র র জন ত স গঠন ইসল ম আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ